রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীর পুঠিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী এখন কোটিপতি। তার বিরুদ্ধে পে-অর্ডার চুরি করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু কর্মকর্তার অবহেলা আর অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে মাসের পর মাস লাখ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় হওয়া সত্ত্বেও তা লুটপাট হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধরার পর ওই নৈশপ্রহরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, পুঠিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ২০০৫ সালে শাহীন নৈশপ্রহরী পদে প্রথমে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসাবে যোগদান করেন। তাকে নৈশপ্রহরীর পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলিল রেজিস্ট্রি করার আগে দলিলের ফি, পে-অর্ডার, উৎসে কর, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্থানীয় সরকার করসহ কয়েকটি সরকারি ফি জমি রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করা হয়ে থাকে। এগুলো যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব নৈশপ্রহরীর হাতে ছিল।
সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একটি সূত্র জানায়, এ অফিসের সাবেক অফিস সহকারী সেলিম হোসেনের শিক্ষায় শাহীন এ জালিয়াতি করে আসছেন। বর্তমানে শাহীনসহ দুজন দলিল লেখক পে-অর্ডার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এ চক্রটি গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বরে ইসুকৃত পে-ওর্ডার ১৭ তারিখে পুঠিয়া সোনালী ব্যাংক শাখায় (পে-অর্ডার) ভাঙাতে গেলে দুই ব্যক্তিকে আটক করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে সোনালী ব্যাংক শাখার কয়েকজন স্টাফ পে-অর্ডার ভাঙানোয় সহযোগিতা করে আসছেন বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান। গত বছর এ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একজন দলিল লেখক আড়াই লাখ টাকা উৎসে কর জালিয়াতি করেছিলেন। তখন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখক সমিতির একাধিক ব্যক্তি বলেন, সাবরেজিস্ট্রি অফিসে শুধু পুকুর চুরি হয় না, এখানে সাগর চুরি হয়ে থাকে। সাবরেজিস্ট্রার নিজেই টাকার বিনিময়ে দলিল রেজিস্ট্রি করছেন। সরকারের রাজস্ব ঠিকমতো আদায় হলো কি না তা দেখার সময় নেই সাবরেজিস্ট্রারের। তার ঘুস ঠিকমতো আদায় হচ্ছে কি না সে খবর প্রতিনিয়ত নেন তিনি। এখানে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সবাই টাকা আদায় করে থাকেন। শাহীন একজন সামান্য বেতনের মাস্টাররোল নৈশপ্রহরী হলেও তার চলাফেরা রাজকীয়। আড়াই লাখ টাকা মূল্যের মোটরবাইক ব্যবহার করে থাকেন তিনি। তিনি যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন। নতুন বাড়ি নির্মাণসহ অলস টাকার ছড়াছড়ি তার। তিনি বর্তমানে একজন আলোচিত কোটিপতি।
শাহীন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের প্রতিটি দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ পে-অর্ডার জমা নিতেন। কিন্তু প্রতিদিন দু-একটি করে পে-অর্ডার নিজে রেখে দিতেন। চুরি করে রাখা পে-অর্ডারগুলো পরবর্তী সময়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা হিসাবে উঠানো হতো। নৈশপ্রহরী শাহীনকে অবশ্য ২১ মার্চ কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। শুধু কর্মকর্তার অবহেলা আর অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে মাসের পর মাস কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় হওয়া সত্ত্বেও লুটপাট করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সাবরেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে নৈশপ্রহরী শাহীন বলেন, আমি যা করেছি তা ভুল করেছি। আমি পরিস্থিতির শিকার। স্যারের কথা অনুযায়ী অফিসের ঘাটতি টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক দলিল লেখক জানান, গত ১০ এপ্রিল (বুধবার) এই ঘটনাটি ৩৭ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ওই নৈশপ্রহরী সাহিন ও দলিল লেখক হাসানুল ইসলাম সেন্টুকে সাড়ে ১৮ লাখ টাকা করে মোট ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
পুঠিয়া সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমানকে মোবাইল ফোনে নৈশপ্রহরী শাহীনকে বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অফিসে আসেন বলে ফোন রেখে দেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]