কুবি প্রতিনিধি :
মে দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত। প্রতি বছর পহেলা মে দিবসটি অবদানকে সম্মান জানাতে, তাদের শ্রম অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্বব্যাপী সমর্থন দেয়।
১৯ শতকের শেষের দিকের শ্রমিক আন্দোলনে মে দিবসের শিকড় রয়েছে। ১৮৮৬ সালে শিকাগোতে ঘটে যাওয়া হেমার্কেট ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য তারিখটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। আট ঘণ্টার কর্মদিবসের জন্য শ্রমিক বিক্ষোভের সময়, একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। যার ফলে সহিংসতা হয় এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং শ্রমিকদের সংহতি দিবস হিসেবে মে দিবস প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা দেয়।
বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস পালন করা হয় সমাবেশ, মিছিল এবং বিক্ষোভের মাধ্যমে। এই ইভেন্টগুলির লক্ষ্য শ্রম সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে সমর্থন করা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রচার করা। কিছু দেশে মে দিবস একটি সরকারি ছুটির দিন, যা শ্রমিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করতে এবং তাদের অবদানের তাৎপর্য প্রতিফলিত করার অনুমতি দেয়।
মে দিবস উদযাপনের থিমগুলি প্রায়ই শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কাজের পরিস্থিতি, লিঙ্গ সমতা এবং শ্রমিকদের মধ্যে সংহতি অন্তর্ভুক্ত করে। দিনটি শ্রম অধিকারের জন্য চলমান সংগ্রাম এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবেলায় সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার স্মারক হিসেবে কাজ করে।
আধুনিক যুগে মে দিবস শ্রম সক্রিয়তা এবং সমর্থনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। আয়ের বৈষম্য, অনিশ্চিত কর্মসংস্থান, অটোমেশন এবং গিগ অর্থনীতির মতো সমস্যাগুলি বিশ্বব্যাপী কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় উদ্বেগের বিষয়। মে দিবস শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সরকার, নিয়োগকর্তা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের দাবি করার সুযোগ দেয়।
শ্রমিকদের অবদানকে সম্মান জানাতে, শ্রম অধিকারের পক্ষে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রচারের জন্য মে দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক এবং সমসাময়িক প্রাসঙ্গিকতা রাখে। সম্মিলিত পদক্ষেপ এবং সংহতির মাধ্যমে, মে দিবস একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজের জন্য চলমান সংগ্রামের স্মারক হিসাবে কাজ করে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া রিমি বলেন, মূলত শ্রম ও শ্রমিকদের শ্রদ্ধার্থেই মে মাসের প্রথম দিনটি উৎসর্গ করা হয়।
শ্রমিকের শোষণ মুক্তির অঙ্গীকারনামা হিসেবে তাৎপর্য সহকারে দিনটি পালন করা হয়। তবে যতই তাৎপর্য কিংবা গুরুত্ব সহকারে দিনটি পালন করা হোক না কেন, সমাজের চিত্র কিন্তু অন্যরকম। এখনও কোনো না কোনো স্থানে শ্রমিকেরা নির্যাতিত হচ্ছে। শিশুরা অবুঝ বলে তাদের দিয়ে অল্প খরচে বেশি কাজ করানো হচ্ছে। বয়স্কদের করা হচ্ছে না যথাযথ সম্মান। আর এভাবে শ্রমিক বৈষম্য আজন্ম থেকে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত বছরের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি দিনেই শ্রমিকদের গুরুত্ব না দিয়ে সবসময়ই তাদের হয়ে অন্যায্যের বিরুদ্ধে কথা বলা।
তিনি আরও বলেন, এভাবে সকল শ্রমিকের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফোটাতে পারলেই স্বার্থক হবে আমাদের মে দিবস। আমাদের সকলকে মে দিবসের তাৎপর্যকে নিজেদের মধ্যে লালন করতে হবে। সাহস নিয়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের যথার্থ সম্মান নিশ্চিত হোক এটাই প্রত্যাশা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী হাছিন মাহতাব মাহিন বলেন, উন্নত দেশ তৈরির কারিগর তার নিজের জনগন, জনবল ও শ্রমশক্তি। বাংলাদেশের এতোদূর অগ্রযাত্রার পিছনে দেশের বড় বড় মাথার চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে যাচ্ছে যারা, দিনটি তাদের। মে দিবস, মে মাসের প্রথম দিনটি তাদের জন্যই উৎসর্গ করা, ৮ ঘন্টার বেশি শ্রম দৈনিক না দেওয়ার দাবিতে সেদিন অনেকে হয়ত নিজের রক্ত প্রাণও দিয়েছেন। যাদের হাত দরে হেটে চলে দেশের অর্থনীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাদ্যের যোগান ও সকল স্তরের প্রয়োজনীয় জিনিস, তাদেরকে মে দিবসের শুভেচ্ছা।
তিনি আরও বলেন, মে দিবসের সফলতার মাধ্যমে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা ও সুস্থতাসহ সার্বিক অধিকার নিশ্চিতের পথ সুপ্রসস্থ হয় যার ফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম হয়ে উঠে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েমা হক বলেন, মে দিবস শ্রমিকদের ঐক্য ও সংহতির প্রতিক। তবে এই দিবস প্রতিষ্ঠার ১৩০ বছর অতিবাহিত হলেও আজও শ্রমিকরা পাচ্ছেন না তাদের প্রাপ্য অধিকার। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ এখনও বিলুপ্ত করতে পারেনি শিশুশ্রম। এর দায় আমাদের সবার। প্রতিবছর মে দিবসটিকে শুধুমাত্রই একটি ছুটির দিন না ভেবে আমাদের উচিত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করতে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]