রাবি প্রতিনিধি:
গতবছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন নভেম্বর মাসে আয়োজনের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তনের লক্ষ্যে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চলে। এতে ৫ হাজার টাকা পরিশোধের মাধ্যমে আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৫৭১ জন শিক্ষার্থী।চার বছর পর অনুষ্ঠাতব্য সেই সমাবর্তনে অংশ নিতে স্বপ্ন বুনতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
তবে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ১ নভেম্বরে দ্বাদশ সমাবর্তন স্থগিত ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিমিষেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মনের ভিতরে বুনতে থাকা স্বপ্নের গালিচা।
সমাবর্তনের নিমিত্ত রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ৮ মাস পরেও অনিশ্চয়তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন। কবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো বিবৃতি দেয়নি সংশ্লিষ্টরা। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। সর্বশেষ অর্থাৎ একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রথম সমাবর্তনের পর ১৯৫৯, ১৯৬১, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৯৮, ২০১২, ২০১৫, ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম সমাবর্তন। মুক্তিযুদ্ধের আগের সমাবর্তনগুলোর বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ২২ এপ্রিল অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ ভিসি থাকাকালীন সময়ে একটি বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতির পর ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর অধ্যাপক আব্দুল খালেক ভিসি থাকাকালীন সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান অষ্টম সমাবর্তনের আয়োজন করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ভিসি থাকাকালীন নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দশম সমাবর্তন। সর্বশেষ একাদশ সমাবর্তন ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য তিন হাজার ৪৩১ জন স্নাতক নিবন্ধন করে। সর্বশেষ দুই সমাবর্তনের ভিসি ছিলেন অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান।
গতবছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন। কিন্তু বিশেষ কোনো কারণ উল্লেখ না করেই ১ নভেম্বর এক নোটিশের মাধ্যমে সমাবর্তন স্থগিত ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।কবে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে তার তারিখ জানিয়ে দেওয়ার কথা বললেও রেজিস্ট্রেশনের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা করা হয়নি সমাবর্তনের সম্ভাব্য তারিখ। সমাবর্তন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীরা।
দ্বাদশ সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ বলেন, সত্য বলতে সমাবর্তনের কথা এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম। ৮ মাসেও সমাবর্তন আয়োজন করতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার দিকেই ইঙ্গিত দেয়। তারা শুধু একটা বড় অংকের টাকা ব্যাংকে রেখে মুনাফার জন্য এই সমাবর্তন আয়োজনের নাটক করেছিল। আর আমার মতো আরো কয়েকজনের টাকা তো জলেই গেল। কারণ আমি পরিবারসহ দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
আরেক শিক্ষার্থী অমিত কুমার বলেন, রাবি সব কিছুতেই অনেক ধীর গতি। সাথে দুর্বল ম্যানেজমেন্ট। স্থগিত হওয়া সমাবর্তন পরবর্তীতে যখন কর্তৃপক্ষ আয়োজন করবেন তখন আমাদের দায়সারা উপস্থিত ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্য থাকে না।রেজিস্ট্রেশনের টাকাটা ব্যাংকে রেখে যে লভ্যাংশ এসেছে ওটার একাংশ আমরা চাই।
সিনথিয়া চৌধুরী নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা একটা উত্তেজনা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। দীর্ঘ চার বছর পর সমাবর্তন আয়োজনের খবর শুনে খুব খুশি ছিলাম। আমরা সানন্দে রেজিস্ট্রেশন করলাম। সমাবর্তন আমাদের কতটা আকাঙ্ক্ষার সেটা রাবি প্রশাসন বুঝবেন না।তারা নির্বাচনের জন্য সমাবর্তন স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন। নির্বাচন তো শেষ। কিন্তু এখনো কোনো নতুন তারিখের ঘোষণা আসছে না। ৫ হাজার টাকা করে প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন করা ছাত্রদের টাকা আটকে রেখেছে। সেই টাকা দিয়ে তারা কী করছে? সমাবর্তন আরো ভালোভাবে করার কোনো প্ল্যান আছে কিনা আমরা জানতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, মহামান্য আচার্যের অনুমোদন এবং তাঁর উপস্থিতি ছাড়া সমাবর্তন আয়োজন করা সম্ভব না। মহামান্য আচার্য বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার ফলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সময় সুযোগ হয়ে উঠে না। তাছাড়া রাজধানী থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় আচার্যের শিডিউল পাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর শিডিউল না পেয়ে সমাবর্তন আয়োজন করলে অযথা টাকা খরচ হবে। আমরা রাষ্ট্রপতির শিডিউলের বিষয়ে কথা বলেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুতই সমাবর্তন আয়োজন করা সম্ভব হবে আশা করছি।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]