ওবায়দুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান স্ট্রোক করেছেন একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা। সেখানে তিনি রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটেন ঢাকার রাস্তা-ঘাটে। দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে,বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধা স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্তবেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।
হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রী সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।
হাবিবুরের দুরাবস্থা নিয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ.ই মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হলে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন । এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এই অসহায় বৃদ্ধের।
হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসক দেয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুরের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধাশতাংশ ভিটে ছাড়া কিছু নেই হাবিবুরের। তাই বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।
হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছ্ইু ছিলো না। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন গাড়ি-বাড়ি হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন রাজার হাল কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেই সাথে সরকারি কর্মকর্তা সহ যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই মামুনের একটি পোস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]