
প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৪, ২০২৫, ১১:৪৬ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ৯, ২০২২, ৮:৫১ পি.এম
মিঠাপুকুরে ৬ ষ্ট-শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় আলোচিত মামলাটি আপোষ ৩ লক্ষ পচিঁশ হাজারে

রুবেল হোসাইন (সংগ্রাম)-
মিঠাপুকুর উপজেলার ০৩ নং- পায়রাবন্দ ইউনিয়নের পূর্ব-জাফরপুর গ্রামে ৬-ষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী(১২) জোরপূর্বক ধর্ষণ, অতঃপর ধর্ষকের বাবা, মায়ের নানাবিধ অপবাদ এবং সামাজিক হেনস্তার শিকার হয়ে বোনের বাড়িতে বিষপান করে ভিকটিমের আত্মহত্যার ঘটনায় আলোচিত মামলাটি তিনলক্ষ পঁচিশ হাজার টাকায় আপোষ মিমাংসায় নন-জুডিশিয়াল ষ্টাম্পে বাদী এবং বিবাদী চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
মামলা নিষ্পত্তির স্বার্থে তৃতীয় পক্ষের কাছে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জমা করেছেন বিবাদী এবং ধর্ষক লাবলুর পিতা। বিভিন্ন খরচ বাবদ বাদীপক্ষ নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা এমন অভিযোগ করেছেন মিমাংসায় উপস্থিত ব্যক্তিরা। যদিও আগাম কোন খরচ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বাদী মনছুর বলছেন, সমস্ত টাকা জমা রয়েছে আমার উকিল মামার কাছে। মামলা আদালত থেকে নিষ্পত্তির পর একযোগে দেয়ার কথা সমস্ত টাকা।
মামলার বিবরণ এবং পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানাযায়, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখে ধর্ষনের শিকার জাফরপুর দাখিল মাদ্রাসার ৬-ষ্ট শ্রেনীর ঐ ছাত্রীকে পায়রাবন্দ স্কুল এন্ড কলেজের মতিয়ার রহমানের দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র লাবলু(লয়েট )২০, বিভিন্ন সময়ে প্রেম নিবেদনসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসতেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং দুপুর ১ টায় ঢাকায় বসবাসরত জনৈক এক ব্যক্তির ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করেন লাবলু।
ধর্ষণের শিকার ঐ ছাত্রী তার পরিবারকে বিষয়টি জানালে, মিঠাপুকুর থানা পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে এএসপি (ডি সার্কেল) কামরুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় এসআই রবিউল ইসলাম, ধর্ষক লাবলুকে দ্রুত গ্রফতার করেন,এবং আদালতের মাধ্যমে রংপুর কারাগারে প্রেরন করেন।পরে ভিকটিমের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি এবং মেডিকেল সম্পূর্ণ হয়। যাহার মামলা নং-৫৯/৫৩৪। ঘটনার পর থেকে ধর্ষনের শিকার ঐ ছাত্রী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন।
ধর্ষক লাবলু গ্রেফতার হওয়ায় তার বাবা মতিয়ার রহমান এবং তার মা লাভলী বেগম ভিকটিমকে একই গ্রামে বসবাসরত হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় দেখা হলে, নানান ধরনের অপবাদ এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসতেন। এর ফলে ভিকটিমের বাবা ঐ ছাত্রীকে পাশ্ববর্তী ভাংনি ইউনিয়নে তার বোন এবং দুলাভাইয়ের বাড়িতে রেখে আসেন। কিন্তু লাবলুর পিতা মতিয়ার রহমান এবং তা মা সেখানে গিয়েও তাদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনকে উস্কানি এবং নানান কুৎসা রটিয়ে আসতেন। এতে ধর্ষনের শিকার ঐ ছাত্রী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। ঘটনার দিন ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং সবার অজান্তে ঐ ছাত্রী বিষপান করে,এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে মারা যায়। মেয়টির মৃত্যুর পরে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে তার বাবা মামলা দায়ের করলে মতিয়ার রহমান এবং আমেনা বেগমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। ধর্ষন মামলায় লাবলু এবং আত্মহত্যার ঘটনায় মতিয়ার রহমান এবং তার স্ত্রীকে আসামি করে পুলিশ আদালতে পৃথক দুটি চার্জশীট প্রদান করেছেন।
আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় জামিনে বের হয়ে মতিয়ার রহমান এবং তার স্ত্রী তাদের ছেলে লাবলুকে জামিন করাতে ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি আপোষ মিমাংসা করার প্রস্তাব রাখিলে শেষে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা রফাদফা হয়,এবং উভয়ের সম্মতিতে স্টাম্প এবং আদালতে আপোষ মিমাংসার জন্য উভয়ে চেষ্টা চালায়। আদালত বিষয়টি বুঝতে পেরে বিচারক মিমাংসার বিষয়টি আমলে নেয়নি,এবং বিচারকার্য চলমান রাখে।
ধর্ষন মামলায় লাভলুর জামিন না হওয়ায়, বিবাদী পক্ষ টাকা ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠে এবং মিমাংসা না করার সিদ্ধান্ত নেন বিবাদী মতিয়ার রহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রেম ঘটিত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তার ছেলে এবং মেয়েটির জীবন নষ্ট করেছেন মনছুর। টাকার লোভে বাবা হয়ে ধর্ষন মামলা দায়ের এবং মেয়েটিকে নিজে মানসিক অত্যাচার করে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। আর ফাঁসিয়েছেন আমাদের। আমরা আর আপোষ করবোনা। আইন যা সাজা দেয়, অপরাধী হলে তা মেনে নিবো।
এ বিষয়ে ধর্ষনের শিকার ঐ ছাত্রীর বাবা বলেন, ৮ এপ্রিল ২০২২ (শুক্রবার) বিকালে স্হানীয় বৈঠকে টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। টাকা ফেরতের ষ্টাম্প এবং পূর্বের ষ্টাম্পটি বাতিল করা হয়েছে। আমাকে কৌশলে আইন আদালতে ব্যবহার করে মামলা হালকা করে টাকা ফেরত নিয়েছে বিবাদীরা। আমার মেয়ের সঙ্গে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে। আমি শেষ অবধি লড়বো।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলাম আজকের বাংলার আলোকে জানান , নিখুঁত তদন্ত এবং আসামি গ্রেফতার করে কোর্টে পাঠানো হয়েছিলো। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আপোষ মিমাংসার বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু আমার করার কিছু নাই। এত বড় ঘটনা বাদী কিভাবে আপোষ মিমাংসা করে আমি শুনে অবাক হলাম। আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।