প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম ও পরিচয় ভাঙ্গিয়ে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা মনসুর আহমেদ এবং তার অন্যতম সহযোগীকে রাজধানীর পল্টন থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
[caption id="attachment_24279" align="aligncenter" width="512"] বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম ও পরিচয় ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা মনসুর আহমেদসহ তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।[/caption]
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাব বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়াল ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী আলোচিত বেশ কয়েকটি প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে সর্বস্তরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সূত্রে জানা যায়, প্রতারক ও জালিয়াতি চক্র কর্তৃক বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম ও পরিচয় ভাঙ্গিয়ে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন এবং নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অর্থের বিনিময়ে পাইয়ে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারক ও জালিয়াতি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে মর্মে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) গোয়েন্দা পর্যালোচনার মাধ্যমে জানতে পারে। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর পল্টন এলাকা হতে প্রতারক চক্রের মূলহোতা (১) মনসুর আহমেদ (৩৩), পিতা আবুল হাসিম কাজী, সদর, চাঁদপুর এবং (২) মো: মহসিন চৌধুরী (৫৫), পিতাঃ মৃত সাইদুল হক চৌধুরী, সিদ্ধিরগঞ্জ, ঢাকা’দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দলিল ও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত প্রতারণা সম্পর্কে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রে ৫/৭ জন সদস্য রয়েছে। চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মুনসুর। চক্রটি বিগত প্রায় ৩/৪ বছর যাবত বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করে আসছে। তারা প্রতারণার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করত। প্রথমত তারা নতুন মোবাইল সীম ক্রয় করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে সেভ করত এবং নিজেরা ঐ ব্যক্তি সেজে নিজেদের প্রতারণা চক্রের সদস্যদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চ্যাটিং করত।
চক্রের সদস্যদের বিভিন্ন মোবাইল নম্বর চক্রের মূলহোতা ও সহযোগীর মোবাইলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ও ছবি দিয়ে সেভ করে। পরবর্তীতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার ব্যপারে চ্যাটিং করে। এই চ্যাটিং কন্টেন্ট তারা এমনভাবে তৈরি করে যাতে যেকোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মনে করে তারা ইতোপূর্বে অনেক কাজ অর্থের বিনিময়ে পাইয়ে দিয়েছে এবং তাদের বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সাথে খুবই সু-সম্পর্ক রয়েছে। এই চক্রের একজন সদস্য তথাকথিত সাইফুল বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে।
যে নিজেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারী পরিচয় দিত এবং সেখানে বসে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দিত বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমান করার জন্য তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তাদের ছবি ঐ সকল আগ্রহী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেখাত।
নিজেদের কোম্পানীকে প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য হিসেবে উপস্থাপন করার লক্ষে তারা হাজার হাজার কেটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দেখাত। তারা কোন অফিসে মিটিং এর সময় বেশভ‚ষা পরিবর্তন করে দামী গাড়ি ও বডিগার্ড নিয়ে নিজেদের উপস্থাপন করত। নিজেদেরকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করার জন্য তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য ভ্রমণ করেছেন মর্মে বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করত।
গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় যে, তারা সরকারি কোন চলমান প্রকল্প সমূহের কাজ পাওয়ার যোগ্য এমন সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে বের করত এবং তাদেরকে ১০% কমিশনের বিনিময়ে ঐ কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখাত। তারা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমানের জন্য তাদের পূর্ব হতে নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে তাদের ভাড়া করা অফিসে মিটিং করত।
অথবা নিজেরা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিসে যেত। সেখানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে বলে মিথ্যা রেফারেন্স ব্যবহার করত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত চক্রের আরেক সদস্য সাইফুল নিজেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে মিথ্যা প্রচারণা করত এবং নিজেকে ঐ রাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী অফিসে কর্মরত বলেও পরিচয় দিত।
গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় যে, তারা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অধিকতর প্রমানের জন্য চলমান সরকারি প্রকল্প সমূহে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে বলে ঐ সব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করত যারা ইতোমধ্যে চলমান কোন সরকারি প্রকল্পের কাজ পেয়েছে। এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সাথে করা ভুয়া চুক্তিপত্র, ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দেখাত।
এভাবে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রটি বর্তমানে তিতাস নদী ড্রেজিং, আড়িয়াল খাঁ নদী ড্রেজিং ও নদীর তীর রক্ষা বাধ প্রকল্প, ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের সংস্কার কাজ, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিস কনস্ট্রাকশনের কাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজসহ প্রভৃতি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণার পরিকল্পনা করছিল বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়।
গ্রেফতারকৃত মনসুর প্রথমে স্থানীয় এলাকায় জমির দালালি করত। পরবর্তীতে সে ঢাকায় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নেয়। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন এভাবে প্রতারণার বিষয়টি তার মাথায় আসে। পরবর্তীতে ঐ এজেন্সির এক কর্মচারীর মাধ্যমে সাইফুল এর সাথে পরিচয় হলে সে প্রতারণার জন্য এই চক্রটি গড়ে তোলে।
গ্রেফতারকৃত মহসিন প্রথমে ঢাকার মালিবাগে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ব্যবসা করত। পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে তার ফ্যাক্টরিটি বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে মতিঝিলে মনসুরের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে এই প্রতারক চক্রের সাথে যুক্ত হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বীণা রানী দাস, পিপিএম, পিপিএম (সেবা)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
সহকারী পরিচালক (অপস্ ও ইন্ট শাখা)
পক্ষে পরিচালক
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]