
স্বীকৃতি বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন ১৯৯৯ সালের ৫ ও ৬ মার্চ ঐতিহ্যবাহী যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম দিনের সকল কার্যক্রম সফলভাবে সমাপনীর পর দ্বিতীয় দিন ৬ তারিখ ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে আনুমানিক পোনে বারটার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বুলু, রতন রায়, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম ও রামকৃষ্ণসহ ১০ জন নিহত হন এবং কমপক্ষে তিন শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন মাত্রায় আহত হন।
টাউন হল মাঠের এই গণহত্যার অভিযোগে ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদীচী হত্যাকাণ্ড মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সে সময় তরিকুল ইসলামের আবেদনে উচ্চ আদালত তাঁর নাম বাদ দেয়। ঐ সময় থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি বিচার কাজ চলছে। বিচার কার্যের দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে উদীচী হত্যাযজ্ঞের অদ্যাবধি বিচার শেষ হয়নি। উদীচী হত্যা যজ্ঞের আজ ২৩ বছর।
হত্যাযজ্ঞের বিচার শেষ না হওয়ায় বিচারহীনতার প্রতিবাদে “যতবার ঝরবে আমাদের রক্ত, সংগ্রাম হবে ততোবার, যতদিন থাকবে রক্তের চিহ্ন, দাবি শুধু চাই এ বিচার” – এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিকে তরান্বিত করতে আজ ( রবিবার) বিকাল সাড়ে চার ঘটিকায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোর জেলা সংসদের পক্ষ থেকে যশোর টাউন হল মাঠের রওশান আলী মঞ্চে প্রতিবাদীগান, আলোচনাসভা, হত্যাকান্ডের ছবি প্রদর্শন, বিচারের দাবীতে ক্যানভাসে স্বাক্ষর, শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মশাল প্রজ্বলন, প্রতিবাদী সংগীত, নৃত্যের আয়োজন করা হয়েছে।
উদীচী যশোর শাখার সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মজনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন সংবাদ পত্রপরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ-দৌলা, আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, জাসদ কেন্দ্রীয় ভারপ্রপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)র সাধারন সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবির জেলা সভাপতি এ্যাডঃ আবুল হোসেন, মহিলা পরিষদের জেলা সাধারন সম্পাদক তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী আহম্মদ সাঈদ বুলবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সাধারন সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু, উদীচীর জেলা সহ সভাপতি কাজী বর্ণ উত্তম, এ্যাডঃ আমিনুর রহমান হিরু ও সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুজ্জামান খান বিপ্লব।
বক্তরা, বিচারহীনতার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।