
প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ৬:৫৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ৮, ২০২৩, ২:১০ পি.এম
প্রাকৃতির এক অপরুপ সৃষ্টি টেংরাগিরি ইকোপার্ক

মোঃ জাকারিয়া হোসেন তালতলী উপজেলা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল টেংরাগিরি ইকোপার্ক। অনেকের কাছে এটি ফাতরার বন বা হরিণ কাটার বন নামে পরিচিত। দিনে দুইবার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয় লবণাক্ত ও মিষ্টি মাটির মিশ্রণের কারণে এখানে রয়েছে সারি সারি বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ ও পশুপাখি। পর্যটকদের জন্য এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান। পার্কের একটু সামনেই আছে সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পাড়ে লাল কাকড়ার ছুটোছুটি ও শেষ বিকেলের সূর্য অস্তের দারুণ এক দৃশ্য যে কোন পর্যটকে মুগ্ধ করার মত। বিভিন্ন দর্শনার্থীরা এই পার্কে আসেন শহরের কোলাহল কাটিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে।
বলছিলাম বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরের এই টেংরাগিরি বনের কথা। বনটিতে রয়েছে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ ও পশু পাখি। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারণে এখানে পর্যটকরা তুলনামূলক কম আসে। তবে শীতের এই মৌসুমে এখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটকরা আসেন। টেংরাগিরি বনের বেষ্টনীতে আছে হরিণ, বাঘ, বানর, শুকর ও কুমির সহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালের ১২ ই জুলাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয় বন বিভাগ পরে ১৯৬৭ সালের এই বনাঞ্চলটিকে টেংরাগিরি বন নামকরণ করে ঘোষণা দেয়। এর আগে স্থানীয়দের কাছে হরিণঘাটার বন, পাথরঘাটার বন ও ফাতরার বনসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। সুন্দরবনের পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর তালতলী উপকূলীয় টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সকিনা বিটের আওতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ইকোট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
পর্যটক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বনটি এতই বিশাল যে ঘুরে দেখতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমরা ঘুরতে গিয়ে দেখলাম বন মোরগ, বক পাখি, বালি হাঁসসহ কয়েকটি প্রজাতির প্রাণী যা সচরাচার দেখতে পাই না। তিনি বলেন, ইকো পার্কের সকল বেষ্টনি ঘুরে ঘুরে দেখে দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে আপনি যখন সমুদ্র সৈকতের কাছে পৌঁছাবেন, আপনার সকল ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে থাকবেন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টিকে। সাগরের বিশালতার কাছে নিজেকে সপে দিয়ে বিশ্রাম দিতে পারবেন মনকে। তবে বনের মধ্যের রাস্তাঘাট ও ছোট কালবাট এবং ব্রিজগুলোকে সংস্কার করা একান্ত জরুরি। এছাড় বিশ্রামাগার গুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
আরেক পর্যটক মো. রফিক অভিযোগ করে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় এই বনাঞ্চলটি এখন অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। এই বনটি থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে। কিন্তু বনের মধ্যে রাস্তাঘাট সহ সবকিছুই ভাঙাচোরা থাকায় পর্যটকরা এখন কম আসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের চাহিদা রয়েছে এই টেংরাগিরি বনটিতে। অতি দ্রুত এই বনটি সংস্কারের দাবিও জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, তালতলী ট্যাংরাগিরি ইকোপার্কটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। ফরেস্ট বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দিলে বনটি সংরক্ষিত থাকবে ও পর্যটকদের নিরাপত্তাহীনতা, বন উজাড়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। ফরেস্ট বিভাগের পাশাপাশি পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের বিশেষ তদারকির জন্য বিশেষ টিম রাখার সুপারিশ করেন তিনি।
সকিনা বিট কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তা প্রয়োজন, পর্যটকদের মূলত কুমির দেখতেই আকর্ষণ বেশি হয়। তাই কুমির প্রজননের জন্য আগামীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টয়লেট ও বাতরুম গুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়াও পার্কের ভিতরে যদি একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয় তাহলে পর্যটকরা এই বনের সৌন্দর্য টা একটু বেশি গ্রহণ করতে পারত।
তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও সোনাকাটা সমুদ্র সৈকতটি দিন দিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। ফরেস্ট বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী লোকবল, ভিতরে নিরাপত্তা, ল্যাম্প পোস্ট ও সৈকতের পারে পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা তৈরি হলে আরও বেশি আকর্ষণীয় হতো এই বনটি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সাদিক তানভীর বলেন, টেংরাগিরি বনে কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছিলাম সেখানের দৃশ্য সত্যি মন মুগ্ধকর। কিন্তু বনটি আরো বেশি পর্যটকদের কাছে ফুটিয়ে তোলার জন্য রাস্তাঘাট কালভার ও বিশ্রামাগার গুলো সংস্কারের জন্য সুপারিশ করবো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।