
প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৯, ২০২৫, ১১:৫৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ২:৪৫ এ.এম
পাটলাই নদীতে মালবাহী জলযান পরিবহনে অতিরিক্ত টোল আদায়ে ব্যবসায়িদের ধমর্ঘট
![]()
মোশারফ হোসেন লিটন সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাট,বড়ছড়া,বাগলী,চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন থেকে কয়লা চুনাপাথর ও যাদুকাটা বালু মহাল থেকে সংগ্রহকৃত মালবাহী নৌকা থেকে জলযান পরিবহনে অবৈধভাবে পাটলাই ডাম্পের বাজার নৌকা ঘাট,কোটগারি,আর কাটি ও বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত টোল আদায়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক ব্যবসায়ি সমিতি মালামাল ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রেখে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র। প্রতিদিন নৌ শ্রমিক ও ব্যবসায়িদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ডাম্পের বাজার নৌকা ঘাট, কোর্টগারি,আর কাটি বিআইডব্লিউটিএ চলাচলকারী নৌযান থেকে প্রতিনিয়ত দিন দুপুরে চলছে রমরমা চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলে শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করা সহ মারধর করছে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্থসহ বালু-পাথর পরিবহনে অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়িদের মাঝে।
এদিকে কয়লা,চুনাপাথর, বালুবাহী নৌকা থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় বন্ধের দাবী জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন মহালে টোল আদায়কারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন ব্যবসায়িরা।
জানা যায়, সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী চক্র উক্ত মহালে নৌযান প্রবেশ করা মাএই বলগেট থেকে আটারো থেকে বিশ হাজার টাকা ও স্টীল বডি নৌকা থেকে এগারো থেকে পনের হাজার টাকা জোর পূর্বক মানি রিসিট ছাড়াই আদায় করছে। শ্রমিকরা রিসিট চাইলে তাদেরকে নৌযান থেকে নামিয়ে লাঞ্ছিত সহ মারধরের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে ইজারাদারের লোকজন।
তারা উপজেলার ইজারাদার হিসেবে পরিচয় দিয়ে চলতি নদী থেকে রানিং অবস্থায় অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। নৌ চলাচলে বাঁধা প্রাপ্ত হলে ব্যবসায়িরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাটলাই নৌকা ঘাটের টোল ইজারাদাররা মানি রিসিট ছাড়াই অবৈধভাবে প্রতি নৌকা থেকে আটারো থেকে বিশ হাজার টাকা উত্তোলন করছে। সরকারী রেইট মোতাবেক মানি রিসিটের মাধ্যমে টোল আদায়ে প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়িরা।
আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের সুকানী মো আব্দুল হাসিম বলেন, পাটলাই নদীতে সরকার নিধারিত হারে বিআইডব্লিউটিএ টোল আদায় করছে না। কিন্তু ইজারাদারের লোকজন বাল্কহেড নৌকা থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন।
নৌরিন পরিবহনের সুকানী নজরুল ইসলাম বলেন, কয়লা, চুনাপাথর,বালি নিয়ে নদী পথে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার সময় অতিরিক্ত টোল দিতে হচ্ছে ইজারাদারকে। এভাবে যদি অতিরিক্ত টোল দিতে হয় তাহলে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। অতিরিক্ত টোল আদায়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
গতকাল সোমবার সকালে পাটলাই ডাম্পের বাজার কোর্টগারি এবং বিআইডব্লিউটির জেটিতে সরেজমিন গিয়ে নৌ শ্রমিকদের সাথে আলাপকালে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে জানা যায়, কোর্টগারি, আর কাটি নৌকা ঘাট এবং বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিকদের মানি রিসিট না দিয়ে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টোল আদায় করায় ইজারাদারের বিরুদ্ধে অনিদিষ্ট কালের জন্য মালামাল ক্রয়-বিক্রয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন আমদানিকারক সমিতি।
মেসার্স সুবর্ণা এন্টারপ্রাইজের সুকানী কবির মিয়া বলেন, পাটলাই বিআইডব্লিউটিএ আমার নৌকা থেকে সরকার নিধারিত হারে টোল ট্যাক্স না নিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন। ২৮০ টন মালের টোল নিয়েছেন বারো হাজার টাকা। কোটগারিতে সাত হাজার টাকা এবং আর কাটি ঘাটে চার হাজার টাকা।
নৌকার মালিক মাসুক মিয়া বলেন,তিন ঘন্টা যাবৎ আমার নৌকা কোর্টগারিতে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা আমার নৌকার সুকানীর কাছে এগারো হাজার টাকা দাবি করেছে। পরে আমি নিজে ইজারাদার মিলন মেম্বারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেছেন চার হাজার টাকা দিয়ে দাও। এখন পর্যন্ত নৌকা কোর্টগারিতে আটক রয়েছে। এদিকে পাটলাই বিআইডব্লিউটিএর জেটিতে আমার নৌকার সুকানির কাছে নগদ আটারো হাজার টাকা দাবি করেছে ইজারাদারের লোকজন। পরে আমি টাকা পাঠানোর পর নৌকা ছেড়েছেন।
ট্যাকেরঘাট বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, পাটলাই বিআইডব্লিউটিএ, কোর্টগারি এবং আর কাটি নৌকা ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় করায় আমরা আমদানি-রপ্তানি অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছি। আমাদের কয়লা আমদানিকারক সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করব।
শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো আলী হায়দার বলেন, আমার জানামতে পাটলাই বিআইডব্লিউটিএ,কোটগারি এবং আর কাটি নৌকা ঘাটের ইজারাদাররা প্রতিদিনেই টোল আদায় করছে। কিন্তু কোন ঘাটে কত টাকা নিচ্ছেন তা জানি না।
মেসার্স সোহাগ এন্টারপ্রাইজের বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদার মো রতন মিয়া বলেন, বাংলাদেশ অভান্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)র দেওয়া চার্ট অনুযায়ী আমরা টোল আদায় করছি। অতিরিক্ত টোল আদায়ে তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ সত্য তবে আমার টোল কেন্দ্রে নয়,কোর্টগারি এবং আর কাটি নৌকা ঘাটে।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, পাটলাই নদীতে টোল আদায়ের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পেলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেই। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে আর তদন্ত সাপেক্ষে অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রমান পাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদীতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বললেন, টোল আদায়ের নামে অতিরিক্ত টাকা নেবার কোন সুযোগ নেই এবং বিষটি খতিয়ে দেখা হবে । কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতি যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আমি উভয় পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে বিষটি সুরাহা করার উদোগ নিব এবং কোন অবস্থায় যেন অতিরিক্ত টোল আদায় না করা হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যহত থাকবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।