মো নাহিদুর রহমান শামীম মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের ইছাইল এলাকায় আম বাগানে তরুণী হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইসূত্রে জানা যায় শিবালয় থানাধীন ২নং উথলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আব্বাস আলী ও উথলী ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জনাব সাধন সরকারসহ স্থানীয় লোকজন অজ্ঞাতনামা মৃত তরুণীর পরিচয় সনাক্ত করতে পারেননি।
পিবিআই, মানিকগঞ্জ জেলার চৌকস টিম ছায়া তদন্ত এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভিকটিম পিংকি আক্তার (২২), পিতাঃ মোঃ মান্নান, সাং পশ্চিম সেওতা, থানাঃ মানিকগঞ্জ সদর, জেলাঃ মানিকগঞ্জের ব্যবহৃত ভেনিটি ব্যাগ (পার্স) উদ্ধারসহ হত্যাকান্ডের সাথে একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আসামী ১। ইয়াছিন হাসান হৃদয় (২২), পিতাঃ মৃত. মোঃ বাবুল মিয়া, মাতাঃ সুফিয়া বেগম, সাং বাড়াদিয়া, ইউপিঃ উথুলি, থানাঃ শিবালয়, জেলাঃ মানিকগঞ্জকে শিবালয় থানাধীন উথলী ইউনিয়নের কাতরাশিন গ্রাম হতে ২০/০৩/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ০৯:০০ টায় গ্রেফতার করা হয়।
আসামী ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় বিবৃতি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায় যে, আসামী ইয়াছিন হাসান হৃদয় এর বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানাধীন উথুলি ইউনিয়নের বাড়াদিয়া গ্রামে।
মানিকগঞ্জের সরকারী দেবেন্দ্র কলেজের বিএ (পাস) ডিগ্রীর ১ম বর্ষের ছাত্র। ভিকটিম পিংকি আক্তার (২২) মানিকগঞ্জ পৌরসভা এলাকার পশ্চিম সেওতা মহল্লার বাসিন্দা।
একই ক্লাসের শিক্ষার্থী। একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে ভিকটিমের সাথে আসামীর পরিচয়। কলেজ এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে ভিকটিমের সাথে আসামীর নিয়মিত কথা হতো। ভিডিও কলেও কথা হতো। সেই থেকে ভিকটিমের সাথে আসামীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ঘটনা সংঘটিত হওয়ার প্রায় ০২ মাস আগে ভিকটিম বন্ধুত্বের সম্পর্কের সুবাদে আসামীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর নিমিত্তে প্রায়ই ভিকটিম পিংকি আক্তার ও আসামী হৃদয় সিনেমা হলে দেখা করতো। তখন ভিকটিম ও আসামীর মধ্যে পরস্পরের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দিন দিন ভিকটিম ও আসামীর মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে ওঠে।
এরপর থেকে ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামী হৃদয়ের সাথে শুধু দেখা করতে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইতো। মাঝে মধ্যে উভয়ের ঝগড়াও লাগতো। তখন ভিকটিম পিংকি আক্তার ঘুমের ঔষধ খাওয়ার ভয় দেখিয়ে আসামীকে চাপে রাখতো। ফলে আসামী হৃদয় হতাশায় ভুগছিল।
এরমধ্যে ভিকটিম পিংকি আক্তারের পূর্বে একটি বিয়ে ছিল অথার্ৎ বর্তমানে ডিভোর্সসি এবং বিয়ের পূর্বেও ভিকটিমের বয়ফ্রেন্ড ছিল ইত্যাদি বিষয়গুলো আসামী জানতে পারে। এসব শুনে ভিকটিমের প্রতি আসামীর রাগ ও অভিমান হয়। কিন্তু ভিকটিম অনবরত ব্ল্যাকমেইল করায় আসামী কিছু বলতে পারছিল না।
সর্বশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিন অর্থাৎ ১৭/০৩/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামী হৃদয়কে দেখা করতে বলে। আসামী হৃদয় দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করায় ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামীর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তখন আসামী হৃদয় ভিকটিম পিংকি আক্তারের সাথে উথলী বাস স্ট্যান্ডে দেখা করে। আসামী ভিকটিমের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে ভিকটিম আসামীকে দেখার জন্য এসেছে বলে জানায়।
একপর্যায়ে ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামীর সামনে একটি পাতা থেকে ৪ টি ঔষধ সেবন করে। বাকি টেবলেট গুলো আসামী নিয়ে ফেলে দেয়। ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামীর সাথে সিনক্রিয়েট শুরু করে। ভিকটিম বারবার বলতে থাকে তার ও আসামীর মধ্যে হওয়া সম্পূর্ণ ঘটনা আসামীর বড় ভাইয়ের নিকট বলে দিবে।
আসামী পারিবারিক সম্মানের কথা চিন্তা করে ভিকটিমকে বুঝিয়ে মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে ফেরত নিয়ে আসে। আসার পথে বাসে বসে আসামী কৌশলে ভিকটিমের মোবাইলে নিয়ে মোবাইলে থাকা ভিকটিম ও আসামীর অন্তরঙ্গ ছবি, ভিডিও ও মেসেজ ডিলিট করে দেয়।
ভিকটিম বাসায় ফেরার পথে বিষয়টি জানতে পেরে আসামীর প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ভিকটিম নিজ বাড়িতে না ফিরে আসামীর সাথে আসামীর গ্রামের বাড়িতে যেতে চায়। তখন আসামী ভিকটিমের হাত পা ধরে সিনক্রিয়েট করতে নিষেধ করে। পরবতীর্তে আসামী ভিকটিমকে নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে চলে যায়। ভিকটিম বারবার আসামীকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে আসামী ভিকটিমকে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেয়।
পরবতীর্তে আসামী রিক্সা যোগে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানাধীন উথলী ইউনিয়নের ইছাইল গ্রামের আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে উথলীর দিকে ভিকটিমকে নিয়ে যাচ্ছিল। একটি অন্ধকার জায়গা দেখে ভিকটিমকে নিয়ে রিক্সা থেকে নেমে আসামী রিক্সাওয়ালাকে বিদায় করে। তখন আসামী মনে মনে ভাবতে থাকে ভিকটিমকে মেরে ফেলার এখনই সুযোগ, না হলে আসামীর পরিবারের মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। আসামী অন্য কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। রাস্তার পাশ থেকে ভিকটিমকে বাগানের ভিতরের নিয়ে যায়। আসামী হৃদয় মনে মনে ভাবে এখনই মাইরা ফেলি। দেরি কইরা লাভ নাই। দেরি করলে মানুষজন চলে আসবে।
এরমধ্যে ভিকটিম দুই হাত দিয়ে আসামীকে জড়িয়ে ধরে। আসামীও ভিকটিম পিংকি আক্তারকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটি চুমা দেয়। একপযার্য়ে আসামী হৃদয় ভিকটিম পিংকি আক্তারকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় গাছের সাথে ঠেকিয়ে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে একটু উচু করে। গলা চেপে ধরা অবস্থায় আসামীর হাত লেগে আসে,পরে মাটিতে বসায়। মুখে থাকা হিজাবের কিছু অংশ গলায় পেচিয়ে ধরে ও মুখে গুজে দেয়,শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
পরে মোবাইল ও পার্স নিয়ে একটু দুরে ফেলে দেয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) হিরন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আসামি হদ্রয় ও পিংকির সাথে প্রেমের সম্পর্কে ছিলো এক সাথে লেখা পড়া করে।প্রেমের কারণে তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়, বিষয় প্রকাশ না হয় সেই কারণে খুন টি করে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]