
নুরুন নাহার বেবী সিলেট
বর্ধিত গৃহকর আদায় করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এই গৃহকর অ্যাসেসমেন্টের সময় (২০১৯–২০) মেয়র ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। বর্তমান মেয়র যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
নতুন গৃহকর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা চলছে নগরজুড়ে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে দু’টি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে: কারও মতে, তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে যথেষ্ট সময় পেলেও গৃহকর বাস্তবায়ন করেননি।
যৌক্তিকতা অনুধাবন করে হয়তো তিনি বিষয়টি স্থগিত রেখে ছিলেন। আবার কেউ বলছেন, আরিফুল হকের স্থগিত রাখা গৃহকরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নতুন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ জন্য সিসিকের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা ‘দুষ্টচক্রকে’ দায়ী করছেন তাঁরা।
বর্তমান ও আগের মেয়রের পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা যখন ‘টক অব দ্য টাউন’ ঠিক তখনই দুই মেয়রের ‘গোপন বৈঠক’ এর খবর চাউর হয়েছে নগরজুড়ে। আলোচনায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বৈঠকের খবরটি পরদিন শনিবার (১১ মে) জানাজানি হয়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেটের একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে দুই মেয়র প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করেন। অন্তত ১০ মিনিট গৃহকর নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে আলাপ করেন সাবেক বর্তমান মেয়র।
এর আগে সিসিকের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং করের পঞ্চবার্ষিকী মূল্যায়ন উপলক্ষে নগর ভবনের সামনে ২০টি বুথে গত ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অ্যাসেসমেন্ট/রি–অ্যাসেসমেন্ট ১৪ মে পর্যন্ত চলবে। এতে কর পরিশোধ করতে এসে নগরবাসী অভিযোগ তোলেন, তাঁদের গৃহকর কয়েক শ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপর থেকে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সংগঠন গৃহকর বাতিল করে যৌক্তিক বা সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজস্ব শাখা জানায়, মূলত গৃহকর খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত প্রতি ৫ বছর পর একবার করে গৃহকর সমন্বয় করার নিয়ম। কিন্তু সিসিকে দীর্ঘদিন তা করা হয়নি। ১৪ বছর পর নতুন গৃহকর নির্ধারণ করায় মানুষের কাছে একটু বেশি–ই মনে হচ্ছে।
এরপরও সিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে আপত্তি করার সুযোগ রেখেছে। নির্দিষ্ট ডি–ফরম পূরণ করে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরলে তা যাচাই করা হবে। আর এটি যাচাই করার জন্য কয়েক দিনের মধ্যেই রিভিউ বোর্ড গঠন করা হবে। এই বোর্ড পরবর্তীতে শুনানির দিন ধার্য করবে এবং আপত্তিকারীর দাবি যৌক্তিক হলে তাঁর কর কমিয়ে দেওয়া হবে।
সিসিক কর্মকর্তারা জানান, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পরিষদের গৃহ করবিষয়ক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নই করছে বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পরিষদ। যদিও আরিফুল হক গত বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তাঁর পরিষদ পুনর্মূল্যায়ন করেছিল ঠিকই, তবে নগরবাসীর আপত্তির কারণে নতুন গৃহকর স্থগিত করেছিল।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান মেয়র ও আগের মেয়র দু’জনই এটিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করেছেন। তাঁরা জানান, এটা কোনো গোপন বৈঠক ছিল না। কাকতালীয় ভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এ সময় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নতুন গৃহকর নিয়েও আলোচনা হয়ে।
মোবাইল ফোনে বর্তমান মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সৌজন্য সাক্ষাতে সাবেক মেয়র কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেহেতু আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাই নাগরিকদের বিরুদ্ধে যাবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত অবশ্যই নেব না। রোববার (১২ মে) আমাদের পরিষদের সভা আছে, সেখানে নতুন গৃহকর নিয়ে আলোচনা হবে। নাগরিক থেকে শুরু করে সুশীল সমাজসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করেই গৃহকর পুনরায় নির্ধারণ করা হবে। অবশ্যই গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।
বৈঠক নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, গোপন বৈঠকের কিছু না। তিনি (মো. আনোয়ারুজ্জামান) আমার সঙ্গে বসেছেন। আমি বিগত সময়ে প্রেসে যা বলেছি, তাই তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছি। পরামর্শ দিতে কিংবা একে অন্যকে সহযোগিতা করতে তো দোষের কিছু নেই।