
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
র্যাব-৩ এবং বিটিআরসি এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রয়কারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ০২ জন গ্রেফতার। বিপুল পরিমান অবৈধ ওয়াকিটকি সেট এবং যন্ত্রাংশ উদ্ধার।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাব বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়াল ভূমিকা পালন করে আসছে।
র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী আলোচিত বেশ কয়েকটি প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে সর্বস্তরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
র্যাব-৩ গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে অপরাধীদের নিকট কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট দীর্ঘদিন যাবৎ বিক্রয় করে আসছে। কিন্তু বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ।
এরই ধারাবাহিকতায় ২২ মে ২০২২ তারিখ রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল ও বিটিআরসি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি এবং যন্ত্রাংশ নিজ হেফাজতে মজুদ রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয়কারী অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক (১) মোঃ আব্দুল্লাহ আল সাব্বির (৩৩), সাং-নরউত্তমপুর, থানা-বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালী ও তার সহযোগী (২) মোঃ আল মামুন (২৭), সাং-শিকদার মল্লিক, থানা-পিরোজপুর সদর, জেলা-পিরোজপুরদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলিস্তান এ পরপর অভিযান পরিচালনা করে মোট ওয়াকিটকি সেট ১৬৮ টি, ওয়াকিটকি সেটের ব্যাটারী ৩৫ টি, চার্জার ৩২ টি, এন্টেনা ৬৩ টি, মাউথ স্পিকার ০৬ টি এবং ব্যাক ক্লিপ ০৬ টি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা জানায় যে, তাদের অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি সেট নিজেদের হেফাজতে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে আসছে। কিন্তু তাদের হেফাজত হতে উদ্ধারকৃত এসকল ওয়াকিটকি এবং যন্ত্রাংশ সংক্রান্তে ধৃত আসামীদ্বয় ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার সংক্রান্ত লাইসেন্স ও কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ বা কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারে নাই। আসামীদ্বয়ের নিকট হতে উদ্ধারকৃত এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সী ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ।
এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া অর্ধ কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। এছাড়াও বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা হতে নীচতলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির দাম পাঁচ হাজার হতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যাটারীর চার্জ ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী ওয়াকিটকির দামের তারতম্য হয়ে থাকে। এছাড়াও ধৃত আসামীদ্বয় অপরাধীদের নিকট ওয়াকিটকি সেট বিক্রয় করেছে কি না এই বিষয়ে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। দেশের সাধারন জনগণ ওয়াকিটকি বহনকারী একজন ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভূয়া ডিবি, র্যাব সদস্য, ডিজি এফ আই সদস্য, এনএসআই সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, রোড ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। এতে করে একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনের প্রয়োজন হয় তখন জনসাধারণ তাদেরকে ভূয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরবর্তীতে অপরাধী শনাক্তকরণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
গ্রেফতারকৃত মোঃ আব্দুল্লাহ আল সাব্বির উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক। সে দীর্ঘ ০৫ বছর যাবৎ অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী নিজ হেফাজতে মজুদ রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে আসছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ আল মামুন ০২ বছর যাবৎ তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত তারা দুই সহ¯্রাধিক ওয়াকিটকি বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট অবৈধভাবে বিক্রয় করে আসছে।
ধৃত আসামীদ্বয় ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার সংক্রান্ত লাইসেন্স ও কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত সনদ ব্যতিত পরস্পর যোগসাজশে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (সংশোধনী/২০১০) এর ৫৫(৭)/৫৭(৩)/৭৪ ধারার অপরাধ করায় ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বীণা রানী দাস, পিপিএম, পিপিএম (সেবা)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
স্টাফ অফিসার (মিডিয়া)
পক্ষে পরিচালক