
ক্রিয়া প্রতিবেদক
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। তাদের নিয়ে উচ্ছ্বাস হয় না, হয় না উৎসব। এমনকি শুধু স্বাভাবিক অনেক দলগত সুযোগ সুবিধাও তারা পান না। তবুও অভিযোগ নেই, বরং সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সানজিদারা। মাঠে নামার আগে জানিয়েছিলেন, আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। সেই প্রতিশ্রুতি তারা রেখেছেন। ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে ১৯ বছর পর সাফে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব ছিনিয়ে এনেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
দ্বিতীয় বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রথমবার ফাইনাল খেলেছি ২০১৬ সালে। সেবার ভারতের বিপক্ষে আমরা হেরে যাই। পাঁচবার সাফের মঞ্চে এসে একবার রানার্স আপ, তিনবার সেমি-ফাইনাল এবং একবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা।
আমরা এবার মাঠে দারুণ ছন্দে রয়েছি, ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। স্বাগতিক হিসেবে ফাইনাল খেলা কিংবা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা সবসময়ের জন্যই রোমাঞ্চকর।
এছাড়াও এবারের ফাইনাল ম্যাচটি কিছুটা ভিন্ন। বহুদিন পর সাফ পাবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেশ। আর তাই এবার নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর একটি ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে সর্বশেষ ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়ে ছিলো আমাদের বাংলাদেশ। এখনও আমরা সেই গল্প শুনি।
বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।
যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথীদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই।
ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষ গুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারো জনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে।
যে দলের অনেকে এ পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলঙ্কার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশা আল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
নেপালের বিপক্ষে ফাইনালের আগে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে ফুটবলার সানজিদার বার্তা। যেখানে নিজেদের শেষটা দিয়ে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের এই নারী মিডফিল্ডার।
কথা রেখেছেন সানজিদারা। আগেও সাফের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে এবারের গল্পটা একেবারে ভিন্ন। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে সাবিনা খাতুনদের দল। মালদ্বীপ, পাকিস্তান, ভারতকে উড়িয়ে সেমিতে ভুটানকে আরও বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটেন সাবিনা-কৃষ্ণারা।
প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসালেও ফাইনালের আগ পর্যন্ত একটি গোলও হজম করেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। শুরুটা মালদ্বীপকে দিয়ে, ৩-০ গোলের দারুণ জয়। পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।
ভারতের বিপক্ষে অধরা জয়ও এবার মুঠোয় এসেছে। ৩-০ গোলের জয় নিয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ভুটানকে নিয়ে ছেলেখেলা করা বাংলাদেশ জেতে ৮-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে। আজকের ফাইনাল ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মেয়েরা।
ফাইনালে জোড়া গোল করেন কৃষ্ণা রানি সরকার, অন্য গোলটি করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র৷ গ্রুপ পর্যায় থেকে সেমি ফাইনাল পর্যন্ত ৪ ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ২০টি, বিপরীতে পুরো টূর্ণামেন্টে নিজেদের জালে গোল ঢুকতে পেরেছে মাত্র ১টি, সেটি ফাইনালে। স্বাগতিকদের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেছেন নেপালের অনিতা বাসনেত।
এবারের আসরে বাংলাদেশের মেয়েদের মাধ্যমে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পেল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ফুটবল আসরটি। আগের আট দেখায় নেপালকে কখনও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
এবারের সাফে পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকটিতে জিতল বাংলাদেশ৷ নেপালের বিপক্ষে আগের ৮ দেখায় বাংলাদেশের হার ছিল ৬টি, ড্র দুটি৷ ২০০৩ সালে এই নেপালেই প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছিল বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল, ১৯ বছর পর সেই নেপালেই সেরা হলেন মেয়েরা৷
বাংলাদেশের বিপক্ষে ঝলমলে রেকর্ড ছিলো নেপালের। আগের ৮ বারের সাক্ষাতে একবারও হারেনি তারা। ৬ বার জিতেছে, ২ বার ড্র। সাফেও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক দাপুটে নেপাল।
এ ছাড়া এবার ঘরের মাঠে খেলা, চেনা দর্শক সব মিলিয়ে শিরোপায় চোখ দিয়ে রেখেছিল নেপাল। কিন্তু বাংলাদেশের অদম্য মেয়েদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি তারা। ৩-১ গোলের পরাজয়ে রানার্সআপ হয় নেপাল।
মেয়েদের সাফে টানা কয়েকটি আসরে ফাইনাল খেলেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে পারেনি নেপাল। প্রতিবারই ভারতের বিপক্ষে হেরেছে তারা। এবার তাদের স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে।
পূর্বের রেকর্ড, কন্ডিশন সবই নেপালের পক্ষে ছিলো। এরপরও দলকে শিরোপা না জেতাতে পেরে হতাশ থাপা।
কোচের পদ ছাড়ার ঘোষণায় তিনি বলেন, আমি নেপাল জাতীয় নারী দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। যদি কেউ সাফল্য না পায়, তাহলে আর সামনে এগোনো উচিত নয়। তখন অন্যদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। আমি সেই কাজটিই করছি।