বাংলাদেশ ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
জেলা পরিষদের সদস্য ও বাইশারীর কৃতি সন্তানদের গণসংবর্ধনা চট্টগ্রামে আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী শেফালী ঘোষ সরকারি চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎকারি শীর্ষ প্রতারক হাবিবুল্লাহ হাবিব কারিকরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। জিয়া সেতুতে অবৈধ ডাম্প ট্রাক না চলার হুঁশিয়ারি ঘূর্ণিঝড় সিডর স্মরণে রাঙ্গাবালীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন। কালুরঘাট সেতুর কাজ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে : সেতু উপদেষ্টা ব্রাহ্মণপাড়ায় বিপুল পরিমাণ মাদক ও অবৈধ ভারতীয় মালামাল জব্দ পীরগঞ্জে আবু সাঈদের কবর জেয়ারত করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক। ইন্দুরকানিতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল পিরোজপুরে জোড়া খুন এর মামলায় ২১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেপ্তার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও আপনজন সম্মাননা চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহৃত মসজিদের ইমাম হাফেজ সোলাইমান কে উদ্ধার অপহরণকারী দাদনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। নাটোরে ভোরের চেতনা পত্রিকার ২৬ তম বর্ষপূর্তী উদযাপিত। বিস্ফোরক আইনে প্রধান শিক্ষক শফিক গ্রেফতার বিএনপি নেতা – কর্মীদের ওপর বোমা হামলার অভিযোগ

কালের বিবর্তনে রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব॥

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:১৭:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
  • ১৬৯৩ বার পড়া হয়েছে

কালের বিবর্তনে রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব॥

 

 

মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ

হেমন্তে রোদ মাখা শীতে বিলের পানি কমে গেলে মানুষ দলে দলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে বিলে নামেন। তলাবিহীন কলসির মতো দেখতে, বাঁশ-বেতের তৈরি শৈল্পিক কারুকাজময় যে জিনিসটি দিয়ে মাছ ধরা হয়, রামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম ‘পলো’।

 

 

 

আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা আকৃতির এ খাঁচা সদৃশ পলো পানিতে তলদেশে ফেলে ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই চিরচেনা প্রাচীন ঐতিহ্য ‘পলো উৎসব’। শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।

 

 

 

রামগঞ্জ উপজেলার  প্রত্যন্ত এলাকার খাল বিল ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে কয়েকদিন পূর্ব থেকেই দিন তারিখ ঠিক করে আশপাশের প্রত্যেক গ্রামের জনসাধারণকে দাওয়াত দেয়া হতো। নির্দিষ্ট দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস শিকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হতেন।

 

 

 

 

জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা। চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।

 

 

 

মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত। এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়। তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচের কোন দিকে ফাঁক না থাকে। এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার। বর্তমানে অনেক হাওর খাল বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

 

 

 

বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিল ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিলে উৎসব করে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতো মানুষ। সেই সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।

 

 

 

আর সে দৃশ্য দেখে অভিভূত হতো গাঁয়ের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কমবেশি প্রায় সবাই বোয়াল, রুই, কাতল, মৃগেল, আইড় ও গজার মাছ শিকার করত। ৩০০ থেকে ৫০০ বাইছালের বহরে একজন করে সরদার থাকত। শিকার করা মাছ নিয়ে বাইছালরা যখন বাড়ি ফিরত তখন মাছ কোটা, ধোয়া ও রান্নার কাজে আনন্দময় চিত্তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ত গৃহবধূরা।

 

 

 

 

কিনে খাওয়া মাছের চেয়ে শিকার করা মাছের স্বাদ ছিল আলাদা তৃপ্তির। কিন্তু সেই ঐতিহ্য এখন অতীত হতে চলেছে। নদীনালা ও খালবিলে পানি নেই, মাছ নেই। একসময়কার মৎস্যভাণ্ডারের তালিকা থেকে অনেক নাম মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছুটা জলাশয় থাকলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।

 

 

 

রামগঞ্জের ৯০ বছরের বৃদ্ধা আবদুর রব বলেন, ‘ঝপ ঝপাঝপ পলো বাও/মজার মজার মাছ খাও’- সদলবলে পলো দিয়ে মাছ ধরার অভিযানে নামার স্নোগান এটি। হারিয়ে যাচ্ছে পলো নিয়ে মাছ ধরা। আগামী প্রজন্ম পলো কী তা চিনবে না। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

জেলা পরিষদের সদস্য ও বাইশারীর কৃতি সন্তানদের গণসংবর্ধনা

কালের বিবর্তনে রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব॥

আপডেট সময় ০৯:১৭:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

 

 

মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ

হেমন্তে রোদ মাখা শীতে বিলের পানি কমে গেলে মানুষ দলে দলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে বিলে নামেন। তলাবিহীন কলসির মতো দেখতে, বাঁশ-বেতের তৈরি শৈল্পিক কারুকাজময় যে জিনিসটি দিয়ে মাছ ধরা হয়, রামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম ‘পলো’।

 

 

 

আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা আকৃতির এ খাঁচা সদৃশ পলো পানিতে তলদেশে ফেলে ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই চিরচেনা প্রাচীন ঐতিহ্য ‘পলো উৎসব’। শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।

 

 

 

রামগঞ্জ উপজেলার  প্রত্যন্ত এলাকার খাল বিল ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে কয়েকদিন পূর্ব থেকেই দিন তারিখ ঠিক করে আশপাশের প্রত্যেক গ্রামের জনসাধারণকে দাওয়াত দেয়া হতো। নির্দিষ্ট দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস শিকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হতেন।

 

 

 

 

জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা। চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।

 

 

 

মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত। এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়। তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচের কোন দিকে ফাঁক না থাকে। এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার। বর্তমানে অনেক হাওর খাল বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

 

 

 

বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিল ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিলে উৎসব করে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতো মানুষ। সেই সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।

 

 

 

আর সে দৃশ্য দেখে অভিভূত হতো গাঁয়ের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কমবেশি প্রায় সবাই বোয়াল, রুই, কাতল, মৃগেল, আইড় ও গজার মাছ শিকার করত। ৩০০ থেকে ৫০০ বাইছালের বহরে একজন করে সরদার থাকত। শিকার করা মাছ নিয়ে বাইছালরা যখন বাড়ি ফিরত তখন মাছ কোটা, ধোয়া ও রান্নার কাজে আনন্দময় চিত্তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ত গৃহবধূরা।

 

 

 

 

কিনে খাওয়া মাছের চেয়ে শিকার করা মাছের স্বাদ ছিল আলাদা তৃপ্তির। কিন্তু সেই ঐতিহ্য এখন অতীত হতে চলেছে। নদীনালা ও খালবিলে পানি নেই, মাছ নেই। একসময়কার মৎস্যভাণ্ডারের তালিকা থেকে অনেক নাম মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছুটা জলাশয় থাকলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।

 

 

 

রামগঞ্জের ৯০ বছরের বৃদ্ধা আবদুর রব বলেন, ‘ঝপ ঝপাঝপ পলো বাও/মজার মজার মাছ খাও’- সদলবলে পলো দিয়ে মাছ ধরার অভিযানে নামার স্নোগান এটি। হারিয়ে যাচ্ছে পলো নিয়ে মাছ ধরা। আগামী প্রজন্ম পলো কী তা চিনবে না। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন।