
রুবেল হোসাইন (সংগ্রাম) রংপুরঃ
রংপুরের মিঠাপুকুরে ঈদের পরে চাচি শ্বাশুড়ির ডাকে জামাতা প্রেম নগর নামে একটি বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসলে স্থানীয় বখাটে, জনপ্রতিনিধি এবং টাউটদের হাতে জিম্মি হয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন জামাতা শফিকুল ইসলাম (৩৩)।
চাচি শ্বাশুড়ির সঙ্গে অপবাদ রটিয়ে জামাতাকে বেধড়ক মারপিট করে নগত চল্লিশ হাজার টাকা এবং একটি ডিসকাভার ১২৫ সিঃসিঃ মোটরবাইকসহ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আরো নব্বই হাজার টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় জামাতা শফিকুল ইসলাম রানীপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটুর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগীর থানায় লেখিত অভিযোগ এবং তার নিজের ও স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী, রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া রুইয়ার পাড় গ্রামের সমুজ মিয়ার স্ত্রী জান্নাতি বেগমের সঙ্গে তার আপন ভাতিজি জামাতা একই উপজেলার মাহিন্দা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত-ইউসুফ আলীর পুত্র শফিকুল ইসলাম কিছু টাকা পেতেন। ঘটনার দিন (সোমবার) ২৪ এপ্রিল জামাতা শফিকুল ইসলামকে তার চাচি শ্বাশুড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার প্রেমনগর নামে একটি জায়গায় দেখা করতে বলেন।
চাচি শ্বাশুড়ি জান্নাতি বেগমের ডাকে জামাতা শফিকুল ইসলাম বাইকযোগে বিকাল আনুমানিক চারটার সময় প্রেম-নগর নামক স্হানে পৌছাইলে চাচি শ্বাশুড়ির সঙ্গে আলোচনা কালীন ১০/১২ জন বখাটে যুবক তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের চাচী শ্বাশুড়ি এবং জামাতা পরিচয় দেয়ার পর জামাতা শফিকুল ইসলামকে বখাটেরা বেধড়ক পিটুনি দিয়ে মোবাইল এবং তার সঙ্গে থাকা দশ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের অবগত করেন।
বখাটেদের সঙ্গে কৌশল অবলম্বন করে ০২ নং- রানীপুকুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী এবং ইউপি-সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবুসহ চেয়ারম্যানের নির্দেশে মধ্যরাতে হরনারায়নপুর মৌজাস্হ জনৈক আক্তারুল ইসলামের বাড়িতে জামাতা শফিকুল ইসলামের মুঠোফোন থেকে চাচি শ্বাশুড়ির মুঠোফোনে অশালীন ম্যাসেজ প্রদান করে,তাদের মাঝে অনৈতিক সম্পর্ক আছে বলে উভয়কে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে জামাই শফিকুল ইসলামের কাছে সুকৌশলে এক’লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করলে মানসম্মানের ভয়ে জামাতা শফিকুল ইসলামের অনুরোধে তার মামা রনজু মিয়া উপস্থিত হয়ে চল্লিশ হাজার টাকা ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলীর হাতে প্রদান করেন এবং বাকী অবশিষ্ট ষাটহাজার টাকা (২৬ এপ্রিল) বিকালের মধ্যে দেওয়ার শর্তে সফিকুল ইসলামকে তার নিজের জিম্মায় নিয়ে যান।
শফিকুল ইসলামের মামা রন্জু মিয়া জানান, আমি চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটুকে অনুরোধ করলেও সফিকুলের ব্যবহৃত নিজ নামীয় ডিসকাভার ১২৫ সিঃ-সিঃ মোটরসাইকেলটি চেয়ারম্যান প্রদান করেনি বরং তার লোকজন পরদিন অবশিষ্ট ষাট হাজার টাকার সাথে তাদের বিচারচার্য হিসেবে আরো ত্রিশহাজার টাকাসহ মোট নব্বই হাজার টাকা দাবি করে মোটরসাইকেল এবং স্টাম্প এবং কাগজপত্র নিয়ে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। অন্যথায় জামাতা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হবে মর্মে হুমকি দেয়।
ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও মোটরসাইকেল ফেরত না পেয়ে অবশেষে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পাঁচ জনের নামে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে চেয়ারম্যানকে মোটরসাইকেলটি থানায় হস্তান্তর করতে বললেও চেয়ারম্যান কালবিলম্ব করে। অবশেষে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানের নির্দেশে মিঠাপুকুর থানা পুলিশের এএসআই- মোস্তাফিজার রহমানকে শুক্রবার (২৮-এপ্রিল) মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসতে বলেন এবং এএসআই মোস্তাফিজার রহমান মোটরসাইকেল উদ্ধারের করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
এ বিষয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটুর সঙ্গে একাধিক সংবাদকর্মী তার বক্তব্য জানতে এবং ইউপি চেয়ারম্যান কিভাবে এই সার্লিশ পরিচালনা করে টাকা এবং মোটরসাইকেল আটক রেখেছে! ফোন দিলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যদি নারী ঘটিত কোনো বিষয় ঘটেও থাকে তবুও পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া উচিত ছিলো। মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার জন্য বিট পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।