
ফলোআপ চিকিৎসক, হাসপাতালের মালিকসহ ৪ জন কারাগারে
রামগঞ্জে সুন্নতে খৎনা করতে গিয়ে শিশুর বিশেষ অঙ্গ পুড়ে চাই হওয়ার ঘটনার মামলায়
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মাহাদি নামে তিন বছরের এক শিশুকে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে বিশেষ অঙ্গ (পুরুষাঙ্গ) পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চিকিৎসক ও হাসপাতালের মালিকসহ ৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল আদালতের বিচারক তাহরিনা আক্তার নওরিন হাসপাতালের মালিক সাইফুল্লাহ মানিক ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রবিউল আলম রিয়াজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার একই মামলায় চিকিৎসক ডা: সরোয়ার হোসেন ও তার সহকারী আব্দুল্যাহ আল মাহমুদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। হাসপাতাল মালিক সাইফুল্লাহ মানিক চাটখীল উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের শোশালিয়া গ্রামের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ রামগঞ্জ পৌর আঙ্গারপাড়া এলাকার আর সরোয়ার রামগঞ্জ ইসলামিয়া হাসপাতালের ডিএমএফ চিকিৎসক। তিনি রামগঞ্জ পৌরসভার রতনপুর এলাকার বাসিন্দা।
এসময় বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, মামলার চার আসামী উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিনে নিয়েছেন। তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর রোববার। সোমবার ২ও ৩ নং আসামী স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন । আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে রোববার প্রধান আসামী ও ৪ নাম্বার আসামীকে একই ভাবে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
জানা গেছে, রামগঞ্জ ইসলামীয়া হাসপাতাল (প্রাঃ) এর ডিএমএফ চিকিৎসক মো. সরোয়ার হোসেন, হাসপাতালের মালিক সাইফুল্লাহ মানিক, পরিচালক রবিউল আলম রিয়াজ ও চিকিৎসকের সহযোগী আবদুল্যাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে গত ৩১ জুলাই আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী শিশুর দাদা আনোয়ার হোসেন। পরে মামলাটি রামগঞ্জ থানাকে এফআইআর ভূক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার নাতি মাহাদিকে সুন্নতে খতনা করানোর জন্য গত ৩১ মে দুপুরে রামগঞ্জ ইসলামীয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ডিএমএফ চিকিৎসক মো. সরোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা লেজার মেশিনের মাধ্যমে মাহাদির খৎনার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নাতির আত্মচিৎকার শোনা যায়। তারা অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখল মাহাদির পুরুষাঙ্গ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। পরে অন্য হাসাপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২৫ জুলাই মঙ্গলবার রামগেেঞ্জ সুন্নতে খাতনা করতে গিয়ে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে আল-ফারুখ হাসপাতালের মালিক ফারুখ হোসেন সহ ভুক্তভোগী পরিবারকে ম্যানেজ করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছিল এবং মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা শুরু করে ইসলামীয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে গত ৩১ জুলাই ভুক্তভোগী শিশু মাহাদীর দাদা আনোয়ার হোসেন চিকিৎসক, হাসপাতালের মালিকসহ চার জনের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী শিশু মাহাদীর দাদা আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, সাড়ে তিন মাস ধরে ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালে আমার নাতির চিকিৎসা চলছে। তারা আমার নাতির জীবনটাই শেষ করে দিয়েছে। আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে এসময় তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে আমরা মামলাটি উচ্চ আদালতে নিয়ে যাব তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আপস করবোনা।