
মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু বদলগাছি (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলা সদরের বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বারোফালা গ্রামে বাবা ও ভাইয়ের উপর অভিমান করে এক নারীর গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছি উপজেলা সদরের বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বারোফালা গ্রামের এরশাদ আলীর ১ম কন্যা ও ঢাকা মানিকগঞ্জ নিবাসী মৃত জালালের স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী আইভি আক্তার (৩৫) ৪ মে সকাল আনুমানিক ১১ টায় বারোফালা গ্রামে তার ভাই গার্মেন্টস কর্মী ইদ্রিস আলীর বাসায় গ্যাসেের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
এলাকা বাসী সূত্রে জানা গেছে, তার বাবার বাড়ি হতে ১ কিমি দূরে তিনি ও তার ভাই ইদ্রিস আলী যৌথভাবে ৯ শতক জমি ক্রয় করেন। সেই জমি তার পিতা এরশাদ আলী তার নামে রেজিষ্ট্রেশন না করে তার ভাই ইদ্রিস আলীর নামে রেজিষ্ট্রেশন করেন। এই নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় ঝাগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তার একটি কন্যা সন্তান আছে নাম জুই(১১), বর্তমানে সে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এলাকা বাসী সূত্রে আরও জানা গেছে, আইভি আক্তার (৩৫) ঢাকা গার্মেন্টসে চাকরি করতেন এবং ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন এবং ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান। গত ৩ মে তিনি ঢাকার (বাসায়) রান্না করার সময় তার হাত পুড়ে গেলে তিনি আবারও ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন এবং তার ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।
৪ মে সকাল আনুমানিক ১০ টায় বারোফালা বাজারে ইয়াদ আলীর কীটনাশক দোকানে যান এবং সেখানে গিয়ে তার মা ইদুর মারবে বলে একটি গ্যাসের ট্যাবলেট ক্রয় করে তা বাসায় নিয়ে যান এবং তা খেয়ে ফেলেন।
আশেপাশের লোকজন কিছু সময় পরে বিষয় টি বুঝতে পেরে তাকে দ্রুত নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক গণ তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবার পথে রাস্তায় তিনি মৃত্যু বরন করেন। বদলগাছি থানা পুলিশ খবর পেয়ে এস আই তুহিনের নেতৃত্বে একটি একটি চৌকষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উক্ত বিষয়ে এস আই তুহিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ এসে যে সিন্ধান্ত গ্রহণ করবেন সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার মোঃ জালাল উদ্দীন জানান, ঘটনা শুনেছি এবং আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে এখনো পুলিশ অবস্থান করছে এবং আমার ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সেখানে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান বর্তমানে বদলগাছি উপজেলার বাহিরে আছেন। তিনি এবং পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন সে সিন্ধান্ত মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
সন্ধ্যা ৭ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান কেটু, বদলগাছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুহাঃ আতিয়ার রহমান, ওসি তদন্ত মোঃ রায়হান হোসেন।
এ বিষয়ে মৃত আইভি আক্তার এর কন্যা কন্যা জুই (১১) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিভাবে কি হয়েছে আমি জানিনা তবে শুধু শুনেছি আমার মা মারা গেছেন। এ বিষয়ে মৃত আইভি আক্তার এর মায়ের কাছে জানতে চাইলে তার কাছে সাক্ষাৎকারের জানি যাওয়া হলে,অজ্ঞান অবস্থায় অসুস্থ হয়ে থাকতে দেখে, সাংবাদিক গণ ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে মৃত আইভি আক্তার এর বাবা এরশাদ আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কিভাবে কি হয়েছে বা কিসের জন্য আমার মেয়ে আত্মাহত্যা করেছে আমার জানা নেই। তবে নওগাঁ নিয়ে যাবার পথে আমাকে জানানো হয়েছে আমার মেয়ে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়েছে। নওগাঁতে আমার ছোট ভাই বসবাস করে। তিনি নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার মেয়ে কে ভর্তি করান এবং ডাক্তার দের পরামর্শ অনুযায়ী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিসন্ধান্ত নেন।সেখানে যাবার পথে রাস্তায় আমার মেয়ে মারা গেলে তারা বাড়িতে ফিরে আসেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না।
যেহুতু এলাকা বাসী ও প্রতিবেশিরা জানান, জমাজমি নিয়ে সমস্যা, সেহেতু আইভি আক্তার এর ভাই ইদ্রিস আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় জমির নিয়ে বিবাদ থেকে মনোমালিন্য হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে তিনি জানান আমি কিছু জানি না।কি জন্য কি হয়েছে আমার জানা নেই। জমির বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জমি তো আমি তাকে দিতে চেয়েছি।
ওসি মুহাঃ আতিয়ার রহমান ও ওসি তদন্ত মোঃ রায়হান হোসেন যৌথভাবে দফায় দফায় তার পরিবারের সদস্য বৃন্দকে ঘটনার বিবরন চাইলে সঠিক কিছু জানতে না পেরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান কেটু দৈনিক বাংলার আলো নিউজ কে জানান, আমি এবং স্থানীয় মেম্বার ও এলাকা বাসী লাশ ময়নাতদন্তে না পাঠনোর অনুরাধা জানায়। কিন্তু ওসি সাহেব জানান আইনী জটিলতা আছে এবং আমাদের উধ্বর্তন কৃর্তপক্ষের নির্দেশে লাশ ময়নাতদন্তে প্রেরণ করতেই হবে আমাদের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে বদলগাছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুহাঃ আতিয়ার রহমান এর জানতে চাইলে তিনি জানান, আইনী কিছু জটিলতা থাকায় এবং উধ্বর্তন কৃর্তপক্ষের নির্দেশে লাশ ময়নাতদন্তে প্রেরন করা হবে। ময়নাতদন্ত শেষে সবকিছু জানা যাবে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। থানা সূত্রে জানা গেছে, ৫ মে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে মৃত আইভি আক্তার এর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৫ মে ময়নাতদন্ত শেষে, বদলগাছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুহাঃ আতিয়ার রহমান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক বাংলার আলো নিউজকে জানান, এ বিষয়ে বদলগাছি থানায় একটি অমৃত্যু( ইউডি) মামলা হয়েছে।