
মোঃ কাওছার আহম্মেদ, রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী।
চোখজুড়ানো আর দৃষ্টিনন্দন চারটি দ্বীপ সমুদ্র সৈকত। ঢেউয়ের গর্জন সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়ার দল বেঁধে ছোটাছুটি। সবুজ বনাঞ্চল। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা । যার নাম জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চরহেয়ার। যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য।
দ্বীপ নয়, চর হিসেবে চেনে সবাই। প্রতিটি চরে আছে অপূর্ব সৈকত। প্রতিটি সৈকত থেকে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। দেখা যাবে দেশি-বিদেশি পাখি, পূর্ণিমায় অপূর্ব জোছনা, লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি।
পর্যটনের সম্ভাবনাময় এলাকা হিসাবে পরিচিত রাঙ্গাবালীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ মাধ্যম একমাত্র নৌপথ। তবুও অসংখ্য পর্যটক প্রাকৃতিক সান্নিধ্য পেতে এখানে ছুটে আসেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকাসহ উত্তর অঞ্চলের অনেক পর্যটকই এখানে আসতে নিরুৎসাহিত হয়।
নয়নাভিরাম পর্যটন স্পটের নিদর্শন।
সোনারচর সৈকত।
অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে থাকা সোনারচরে সোনা নেই ঠিকই কিন্তু আছে সোনালি আভা। সূর্যের রশ্মি যখন সৈকতের ওপর পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয় সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। মনে হবে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে স্বর্ণের। সোনারচর উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণে ১০ কিলোমিটার দূরে সাগরের মাঝে নয়নাভিরাম দ্বীপ সোনার চর। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের লাল আভা সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে এর নাম সোনার চর। এখানে আছে ম্যানগ্রোভ বন। এর ভেতরে আছে ছোট ছোট খাল। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনার চরে আছে হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্য শুয়োর ও বানর। আছে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।
চর হেয়ার সৈকত
সোনার চর থেকে এক কিলোমিটার দূরে চর হেয়ার দ্বীপ। স্থানীয়দের কাছে এটি কলাগাছিয়ার চর নামে পরিচিত। চর হেয়ারে প্রচুর পাখি আছে। আর আছে এক বিশাল সৈকত।
চর তুফানিয়া সৈকত
কুয়াকাটা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে চর তুফানিয়া দ্বীপ। এটি লাল কাঁকড়ার নিরাপদ আবাসভূমি। ষাটের দশকে দ্বীপটি জেগে ওঠে। তুফানের সময়ের মতো বিশাল বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ে বলে জেলেরাই নাম দিয়েছেন তুফানিয়া। এখানে রয়েছে ৫০০ একরের বনাঞ্চল।
জাহাজমারা সৈকত।
সৌন্দর্যের কমতি নেই ‘জাহাজমারা’ দ্বীপেও। এই সৈকতের কথা অনেকেই জানেন। এখানে সাগরের ঢেউয়ের তালে বিচিত্র প্রজাতির মাছের ছোটাছুটি চোখে পড়ে। স্থানীয়দের দাবি, অনেক অনেক দিন আগে এই সৈকতে একটি জাহাজ আটকা পড়ে এবং ধীরে ধীরে সেই জাহাজ বালুতে ডুবে যায়। সেই কিংবদন্তি থেকে স্থানীয়রা এর নাম রাখেন জাহাজমারা। দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান মৌডুবি ইউনিয়নে। এই সৈকতের প্রধান আকর্ষণ সূর্যাস্ত।
এ ছাড়া সৈকতজুড়ে দেখা যাবে তরমুজের বিস্তীর্ণ মাঠ। যেখানে আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ। সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। আছে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। বন বিভাগের ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
সম্ভাবনাময় এই চারটি পর্যটন কেন্দ্রের কোনোটিতেই নেই হোটেল-মোটেল। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সোনারচর, জাহাজমারা, তুফানিয়া ও চরহেয়ারে পন্টুন স্থাপন করা জরুরি। একইসঙ্গে হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করলে পর্যটকদের এসব দ্বীপে আসার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে। প্রশাসনের তথ্য বলছে, রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই সম্ভাবনা আরও বেড়েছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য।
» এক দিনে কয়েকটি দ্বীপ ও সৈকত দেখা যাবে।
» বর্ষায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস না জেনে কোনো দ্বীপে যাওয়া যাবে না।
» এই দ্বীপ ও সৈকতগুলো ভ্রমণের আদর্শ সময় শীতকাল।
» প্রয়োজনে স্থানীয় অভিজ্ঞ মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিন।
যেভাবে আসবেন।
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা পর্যন্ত আসবেন। গলাচিপা সদর থেকে সড়ক পথে পানপট্টি কিংবা বোয়ালিয়া ঘাটে আসবেন। সেখান থেকে স্পিটবোট কিংবা লঞ্চে রাঙ্গাবালী আসবেন।