
কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি।
ডিজিটাল ও স্মার্ট তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার কৃষ্টি কালচারের সাথে সম্পর্কিত কাচারি ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় কাচারি ঘর ছিল গ্রামের আভিজাত্যের প্রতীক। বাড়ির আঙ্গিনার কাচারি ঘর তখন অতিথিরা থাকত। বিশেষ করে গ্রাম্য সালিসি বৈঠক বসত এই কাচারি ঘরে। কাচারি ঘরটি মূল বাড়ির বাইরে থাকার কারণে এই ঘরটি বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলত। এ ঘরেই অনেক সময় রাত যাপন করতেন বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথি, পথচারী, মুসাফির কিংবা আত্মীয়স্বজনরা। অনেক সময় বাড়ির প্রাইভেট মাস্টাররাও থাকতেন এই ঘরে। অনেক বাড়ির কাচারিতে স্কুল কলেজগামী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতেন। অনেক সময় সকালে এটিকে মক্তব হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাড়ির সৌন্দর্য এ কাচারি ঘর এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ঐ সময় যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল তাদের প্রায় বাড়িতেই কাচারি ঘর ছিল। শালিস বিচারসহ গ্রামের সকল সামাজিক কাজগুলো পরিচালিত হতো কাচারিঘর থেকেই। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও এদেশে অধিকাংশ বাড়িতেই কাচারি ঘরের প্রচলন ছিল। এখন আর গ্রাম গঞ্জের সেই পুরনো দিনের ঐতিহ্য কাচারি ঘর তেমন আর চোখে পড়ে না।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ৪৫ টি গ্রামের মধ্যে দুই একটা বাড়িতে কাচারি ঘর দেখা গেলেও সেগুলো অযত্নে অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখন আর তেমন ব্যবহার হয় না। নেই সেই পুরনো দিনের কাচারি ঘরের মধ্যে গল্প আড্ডা কিংবা রাত জেগে বিভিন্ন জারি সারি গান বাজনা, তাস ও লুডু খেলা আসর। উপজেলার বিশিষ্ট সমাজসেবক শিক্ষা অনুরাগী আব্দুল লতিফ খসরু বলেন,ওই সময় কাচারি ঘরে সমাজের সকল প্রকার সামাজিক কার্যকলাপ চলত। আমাদের প্রত্যেকের উচিত সমাজের পুরাতন স্মৃতিগুলো ধরে রাখা।উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন আধুনিক ও ডিজিটাল যুগের কারণে গ্রাম গঞ্জের বিত্তমানরা শহরের গিয়ে বাড়ি করছে। তারা আর গ্রামের দিকে খেয়াল রাখছে না। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে দেশের বাইরে চাকরিসহ বাড়ি গাড়ী করছে। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য কাচারি ঘরের দিকে তেমন একটা নজর দিচ্ছে না বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা। ফলে কাচারি ঘরের কোন কার্যক্রম এখন আর চলমান নেই।