
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি কেনা বেচার সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠুসহ চক্রের ০৫ সদস্য’কে রাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী, মিরপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এহেন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে।
ইতোপূর্বে র্যাবের অভিযানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা বেচা চক্রে অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজের এডমিনসহ চক্রের ০৫ সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। একই সাথে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক কিডনি কেনা বেচার অন্যান্য চক্রগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সাইবার মনিটরিং ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখ রাত ০৮.০০ ঘটিকা হতে ২০ জুলাই ২০২২ তারিখভোর ০৫.০০ ঘটিকা পর্যন্তর্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর যৌথ অভিযানেরাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী ও মিরপুর এলাকায়কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা (১) মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪৯), পিতা-মৃত আজাহার মোল্লা, থানা- মিরপুর মডেল, ঢাকা, (২) মোঃ মিজানুর রহমান (৪৪), পিতা- মোঃ রফিউদ্দিন মোল্লা, থানা- লোহাগড়া, জেলা- নড়াইল, (৩) মোঃ আল মামুন@মেহেদী (২৭), পিতা-সোহেব, থানা- সোনারগাঁও, জেলা- নারায়নগঞ্জ, (৪) মোঃ সাইমন (২৮), পিতা- মোঃ জসীম উদ্দিন, থানা-চরফ্যাশন, জেলা-ভোলা, (৫) মোঃ রাসেল হোসেন (২৪), পিতা- আবুল বাশার বকুল, থানা- ফরিদগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুর’কে গ্রেফতার করা হয়।
উক্ত অভিযানে কিডনি ক্রয় বিক্রয় চক্রের সদস্যদেরনিকট হতে বিভিন্ন ভিকটিম এর সাথে চুক্তির এফিডেভিট কপি, ভুক্ত ভোগীদের পাসপোর্টসহ মোট ১৪টি পাসপোর্ট, কিডনি ক্রসম্যাচিং এর বিভিন্ন দলিলাদি, দেশী ও বিদেশী মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি দপ্তরের জাল সীলমোহর, খালি স্ট্যাম্প, সিপিইউ, মোবাইল ও সীমকার্ড জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা বেচা এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা মূলত ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় এর এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এই চক্রের সদস্যরা পাশর্^বর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনা বেচা সদস্যদের চক্রের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে বলে জানা যায়।
চক্রের ১ম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের ২য় দলটি ১ম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে ৩য় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।
এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভূক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপাচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ/অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।
গ্রেফতারকৃতরা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগী প্রতি২০ হতে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে মাত্র ৪ থেকে ৪.৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শনকরা হতো।
বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম অভিযুক্ত মোঃ শহিদুল ইসলাম মিঠু (৪৯) ২০১৬ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে গমণ করে। সেখানে অবস্থানকালীন সে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখতে পায় এবং সে নিজেই কিডনি প্রতিস্থাপনের অৈেবধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। পাশর্^বর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে যোগসাজশে সে এখানে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা হতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন।
অদ্যবধি তার মাধ্যমে ৫০ এর অধিক কিডনি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে মর্মে সে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত মোঃ মিজানুর রহমান (৪৪) কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট, মেডিকেল ডকুমেন্টস, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরী করে থাকে। উল্লেখ্য, যে সকল ব্যক্তিদের কাগজপত্র সঠিক থাকে না কিংবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকে,তাদের কাগজপত্রজাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুুত করে থাকে এবং সে১০ বছরের অধিক সময় ধরে এ কাজ করে আসছে মর্মে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সাইমন (২৮)বিগত ০১ বছর পূর্বে এবং মোঃ আল মামুন@মেহেদী (২৭) ০৬ মাস পূর্বেচক্রটির মাধ্যমে জনপ্রতি ০৪ লক্ষ টাকায় কিডনি বিক্রয় করে। পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ে অধিক পয়সা উপার্জনের লোভে তারা এ চক্রটির সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং কিডনি ডোনার ও ক্রেতা সংগ্রহে লিপ্ত হয়।
তারা নিজেদের সুস্থতার প্রমান দেখিয়ে অন্যান্য ডোনারদের কিডনি বিক্রয়ে আগ্রহী করত। তারা অদ্যবধি ১০ জনের কিডনি ক্রয় বিক্রয় করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত মোঃ রাসেল হোসেন (২৪) ও তারা দুইজন মিলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সম্ভাব্য ডোনারদের সংগ্রহ করতো।
গ্রেফতারকৃত এই চক্রটি কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের পার্শ্ববর্তী দেশে কিডনি চিকিৎসায় সহায়তার নাম করে, অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে, কিডনি প্রতিস্থাপনে উৎসাহিত করতো। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান এর আড়ালে তারা এই ভয়ঙ্কর কিডনি কেনা বেচার সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছিল বলে র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। স্বাক্ষরিত/- নোমান আহমদ সহকারী পুলিশ সুপার সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) অধিনায়কের পক্ষে মোবাইলঃ ০১৭৭৭৭১০১০৩।