
রুবেল হোসাইন, রংপুর:
রংপুরের মিঠাপুকুরে মোটরসাইকেল চুরির মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে হোটেল ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে এক ডিলার ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে। এতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন হোটেল ব্যবসায়ি যুবক এবং তার পরিবার। স্হানীয়দের দাবি, এমন মিথ্যা এবং ঘৃণ্যতম অভিযোগ রটায় ঐ ব্যবসায়ি এবং তার পরিবার লোক-লজ্জায় গৃহবন্ধী হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে একটি কুচক্রী মহল মিথ্যা মামলা দায়ের করার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করছেন।
এলাকাবাসী এবং স্হানীয়রা জানান, সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী ডাবরার বাসিন্দা ফাস্টফুডের ডিলার মোঃ রবিউল ইসলাম,শঠিবাড়ী হরিপুরে তার ভাড়া বাসার সামনে তার নিজ ব্যবহৃত একটি (ডিসকাভার ১১০ সিসি) মোটরবাইক রেখে ভিতরে প্রবেশ করেন এবং সন্ধ্যা আনুমানিক-৬ টার সময় বের হয়ে দেখেন তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নেই। পরে তিনি খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখেন।
মঙ্গলবার (২৮-ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ আলমগীর নামে এক ব্যক্তি শঠিবাড়ী কাঁচামাল বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলের ছেলে আনিছুর রহমানের কাছে গিয়ে বলেন,তুমি রবিউলের মোটরসাইকেল চুরি করেছো,ইয়াকুব নামে ১২ বছরের এক শিশু তোমাকে মোটরসাইকেলটি চুরি করতে দেখেছে। আমার সঙ্গে একটা রফাদফা করো,আমি সব মিমাংসা করে দিচ্ছি। নাহলে আমি গাড়ির মালিক রবিউলকে নিয়ে থানায় যাচ্ছি। কাল্পনিক এ অপবাদ রটায় আনিছুর এবং তার বাবা জলিল প্রতিবাদ জানায় এবং বিষয়টি স্হানীয়দের জানালে তাদের তোপের মুখে আলমগীর ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।
১৪ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের বীট পুলিশ কর্মকর্তা এসআই-ইমরান মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটরসাইকেলের মালিক,প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ঐ শিশুটি এবং অভিযুক্ত আনিছুর রহমানসহ সন্দেহভাজন হাবু নামে এক ব্যক্তিকে থানায় ডেকে আসেন এবং বুধবার (১ মার্চ) রাত আনুমানিক ৮ টার সময় সকলে থানায় আসলে শিশু ইয়াকুব জানায়, সে আনিছুরকে মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে দেখেছে। স্হানীয়রাসহ আনিছুর এবং তার পরিবার প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, আনিছুরের পূর্বের এমন কোনো রেকর্ড বা তাদের পরিবারের এমন কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তারা সঠিক তদন্তের জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানায়।
রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়া শিশুটিকে তার নানী খুঁজতে গিয়ে জানতে পারে আলমগীর থানা থেকে ইয়াকুবকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে এবং তিনি ইয়াকুবকে বাড়িতে নিয়ে আসতে গেলে ইয়াকুব জানায়, আলমগীর তাকে তিনহাজার টাকা দিবে,কিন্তু তার শেখানো কথা বলার পরও তাকে টাকা না দিয়ে এখানে রেখেছে এবং আগামীকাল সকালে তাকে আলমগীর টাকা দিতে চেয়েছে। এজন্য আজ রাতটা এখানে থাকতে বলেছে। পরে জেদাজেদি করে তার নানী তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পরে শিশুটি জানায়, আলমগীর যাহা শিখে দিয়েছে সে তাই বলেছে। আনিছুরকে সে মোটরসাইকেল চুরি করতে দেখেনি। তার নানা আজিজুল ইসলাম বলেন, যেদিন মোটরসাইকেল হারায় সেদিন আমিও শ্রমিকের কাজ করছিলাম। আমরা কেউ কিছু দেখিনি। অযথা এলাকার দালাল হিসেবে পরিচিত আলমগীর এই মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে। ইয়াকুবের নানী হাছনা বেগম জানান, আনিছুর ভালো ছেলে তার বিরুদ্ধেই আমার নাতিকে দিয়ে আলমগীর মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়েছে। আমরা এর জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
স্হানীয়দের মধ্যে মুকুল, মিলন,মোকলেছার, লাইজু নামে কয়েক ব্যক্তি জানান, আনিছুর একটা ভালো ছেলে,জীবনে তাকে আমরা সিগারেট খাওয়াও দেখিনি। তার বাবা আব্দুল জলিল ৪০ বছর আগে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে এখানে উঠে এসে তার ছেলে আনিছুরসহ কঠিন পরিশ্রম করে চায়ের দোকান চালিয়ে এখানে কিছু জমি আর নিজস্ব বাড়ি করেছে। তাদের উন্নতি আর ব্যবসায়ীক সফলতা দেখে অনেকে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। যেহেতু তারা উঠে আসা লোক সেহেতু তাদের স্হানীয় টাউট হিসেবে পরিচিত আলমগীর মিথ্যা নাটক সাজিয়ে টাকা পয়সা নেওয়ার পায়তারা করছে। তাদের দাবি, মোবাইল জুয়ায় জড়িয়ে কিছু তরুণ এর আগেও এমন কাজ করেছিলো, এটাও হয়তোবা তাদের কাজ। আর গাড়ি চুরির বিষয়টিও নাটক হতে পারে!
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আনিছুরের বাবা আব্দুল জলিল জানান, এমন অপবাদের চেয়ে আমাদের মরন হলে ভালো হতো। আনিছুর রহমান বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। যারা এমন অপবাদ রটিয়ে তাদের হেনস্তা করছে,তাদের বিচার দাবি করি। সেই সঙ্গে পুলিশের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ সঠিক তথ্য উদঘাটন করে আমাদের রক্ষা করুক। নাহলে আমাদের মরন ছাড়া উপায় নেই।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং মিঠাপুকুর থানা পুলিশের এসআই ইমরান জানান, শিশুটি আনিছুরের নাম কেনো বললো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে ঐ শিশুর একটি ভিডিও বক্তব্য তাকে প্রদান করা হলে তিনি বলেন, আমরা নির্দোষ কাউকে ফাঁসাবোনা। এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) নুর আলম জানান, আমরা কোনো ভালো মানুষের নামে মামলা করবোনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে তদন্ত করছি।
একই অভিমত প্রদান করেন, অভিযোগ তদন্ত করতে যাওয়া আরেক কর্মকর্তা এসআই-মনিরুজ্জামান,তিনি জানান-আনিছুর ভালো ছেলে সেটা অনেকে জানিয়েছে,তবু আমরা আরো তদন্ত করে দেখছি। তবে এ বিষয়ে বাইকটির মালিক এবং থানায় অভিযোগকারী রবিউলের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।