
এম মনির চৌধুরী রানা
সূর্য তখন ডুবু-ডবু ভাব। যে সময় সুন্দর সূর্যাস্ত বা শান্ত প্রকৃতির মুক্ত বাতাস সেবনের জন্য গ্রামীণ পথে ঘাটে এলাকাবাসির ঘুরে বেড়ানো, খেলাধুলায় ছোটদের হৈ-হুল্লোড় করে এলাকা মাতিয়ে তোলার কথা সে সময় এলাকাটি একেবারে শুনশান। পথ ঘাট একদম ফাকাঁ। দোকানপাট বন্ধ। ক্ষেত-খামার,কাজ-কর্ম ফেলেই লোকজন ঘরে ঢুকে গেছে অনেক আগেই। আগন্তুুকদের ডাক শুনেই জানালার ফাকঁ ফোকর দিয়ে উকি দিচ্ছে বাড়ির লোকজন। চোখে-মুখে ভীতির ভাব। কি যেন তাড়া করছে তাদের। নির্ভয়ের অনুরোধে বেড়িয়ে আসে কয়েকজন।
কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ঘুম নেই তাদের চোখে। প্রতি রাতেই হাতি নেমে আসে এলাকায়। মানুষ না পেলে তছনছ করে ক্ষেত খামার ,ঘর-বাড়ি। গোলা ভেঙ্গে খেয়ে যাচ্ছে ধান। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে এলাকার নিপুন মেম্বার বাড়ীতে তান্ডব চালিয়ে কারো কোন ক্ষতি করতে না পেরে গোলা ভেঙ্গে ধানের কিছু খেয়েছে বাকীগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। গৃহকর্তা নিপুন দে জানান শেষ রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় সবার।
জানালার ফাকঁ দিয়ে দেখি একটা হাতি দরজা ঠেলছে। ঘুম থেকে জেগে ঘরের সবাই দৌড়ে ছাদে উঠে যাই। উকি দিয়ে দেখি হাতিটি গোলা ভেঙ্গে ধান খাওয়া শুরু করেছে। গোলায় আমার ৪০/৫০ আড়ি ধানের মধ্যে কিছু খেয়েছে বাকিগুলো নষ্ট করে দিয়ে চলে গেছে। যাতে আমি প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এলাকার ছবি বসু বলেন- ক্ষেত-খামারের আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। গতকাল সকালে বেগুন ক্ষেতে গিয়ে দেখি সব শেষ।
যেন দৈত্য নেমেছে। হাতির পা দিয়ে দুমড়ে -মুচড়ে দিয়েছে সব। প্রায় ২০/৩০ হাজার টাকার বেগুন ক্ষেত নিমেষেই শেষ করে দিয়েছে হাতির দল। শুধু ছবি বসু কিংবা নিপুণ মেম্বার নয়। ঘটনাস্থলে উপস্হিত রুপন দে আরতি দেব,রত্না নন্দী ও মীরা দে এরা সবাই বলেন আগে এলাকার অনেককেই পায়ে পিষ্ট করে মেরেছে হাতি। মাঝখানে কিছুদিন বিরতির পর গত সপ্তাহ খানেক ধরে হঠাৎ বেড়েছে উপদ্রব। রাত হলেই পাশ্ববর্তী পাহাড় থেকে নেমে আসছে হাতি। সারারাত তান্ডব চালিয়ে ভোরে ফিরে যাচ্ছে। ভয়ে সূর্যাস্তের সাথে-সাথেই ঘরে ঢুকে যাচ্ছে এলাকার মানুষ।
কখন কার ঘর আক্রমণ করে এ ভয়ে রাতভর নির্ঘুম রাত কাঠাতে হচ্ছ। একরাত দু’রাত নয় গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই চলে আসছে এ অবস্হা। নির্ঘুম তাদের দু’চোখ যেন প্রশ্ন করেই যাচ্ছে এভাবে আর কত রাত। এলাকাবাসির অভিযোগ ঘটনাটি স্হানিয় প্রশাসনকে জানিয়েছে তারা অনেকবার, কিন্তু কোন প্রতিকার নেই।স্হানিয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন সরকারি নিষেধ থাকায় কিছু পদ্ধতি দিয়ে হাতিকে তাড়ানো ছাড়া অন্য কিছু করার নেই। কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও এখন প্রতিদিন হাতি নেমে তান্ডব চালাচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষতিগ্রস্হদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানান। তবে ক্ষতিপূরণ নয় এর থেকে নিস্তার চান এলাকাবাসি।